নির্মাণের জন্য ঠিকা জমির লিজ় পেতে বসবাসকারী প্রজা বা ভাড়াটেকে আর ভূমি রাজস্ব দপ্তরের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না। পুরসভায় গেলেই মিলবে সমাধান। সেই জন্য ঠিকা কন্ট্রোলারের নিয়ন্ত্রণ ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। মনে করা হচ্ছে, এতে ঠিকা জমিতে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হবে, সেই সঙ্গে বাড়বে পুরসভার রাজস্ব।
পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর ডেপুটি ঠিকা কন্ট্রোলারের অফিস কলকাতা পুরসভায় (Kolkata Municipal Corporation) করে দিয়েছে। হাওড়া পুরসভাতেও (Howrah Municipal Corporation) এক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বহুতল বা যে কোনও নির্মাণের জন্য আইনি পথে ‘ঠিকা লিজ়’ নিতে ঠিকা প্রজা বা ঠিকা ভাড়াটেরা আবেদন জানাতে পারবেন। সব কিছু যাচাই করে ডেপুটি ঠিকা কন্টোলার তা সরাসরি পুর কমিশনার ও মেয়রকে জানাবেন। যাতে পুরসভার পক্ষে ঠিকা জমির সঠিক আইনি মিউটেশন, বাড়ি তৈরির নকশা ও অন্যান্য ছাড়পত্র দেওয়া সহজ হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ঠিকা জমিতে বসবাসকারী টেন্যান্ট এবং ভাড়াটেদের (ঠিকা আইনে টেন্যান্ট ও ভাড়াটেকে আলাদা হিসেবে দেখানো হয়েছে) রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘ঠিক লিজ়’ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা নিজেদের ব্যবহৃত ঠিকা জমিতে একক ভাবে অথবা যৌথ ভাবে নির্মাণ করতে পারেন। তা ছাড়া, আইন সংশোধনের ফলে ঠিকা জমিতে গড়ে ওঠা বস্তি বা বাজারেও পুরসভা একক ভাবে বা যৌথ ভাবে উন্নয়নের জন্য নির্মাণকাজ করতে পারে। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছিল, রাজ্য সরকারের ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অধীন ঠিকা কন্ট্রোলারের কাছ থেকে ‘ঠিকা লিজ়’ পেতে সময় লাগছিল অনেকটা। তাতে হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটেরা। ফলে, বেআইনি ভাবে ঠিকা জমিতে প্রজা ও ভাড়াটেরা অনেকে নির্মাণকাজ চালাচ্ছিলেন, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। আবার পুরসভা বঞ্চিত হচ্ছিল রাজস্ব থেকে। শহরের বহু বাজার ও বস্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই দীর্ঘসূত্রিতা।
নবান্নের (Nabanna) ভূমি রাজস্ব দপ্তরের মতে, কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা এলাকাতেই ঠিকা জমি রয়েছে। কলকাতায় ঠিকা জমি প্রায় ২ হাজার একর। হাওড়া পুর এলাকায় প্রায় ৫১৭ একর ঠিকা জমি রয়েছে। জমিদারি উঠে যাওয়ার পর সেই সব জমিতে থাকা প্রজাকে রাজ্য সরকার ঠিকা টেন্যান্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে ঠিকা জমির বাড়িতে ভাড়াটে বসানোর অধিকারও দেওয়া হয়। বহু সংখ্যক মানুষ ঠিকা জমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করেন। তাঁদের বলা হয় ঠিকা প্রজা। পরে তাঁরা হন ঠিকা টেন্যান্ট। তাঁদের অধীনে আবার অনেক ঠিকা ভাড়াটেও রয়েছেন। রাজ্য সরকার ১৯৮০ সালে জমিদারদের সব ঠিকা জমি অধিগ্রহণ করে। পরে জমিতে ঠিকা টেন্যান্ট ও ঠিকা ভাড়াটেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার দফায় দফায় আইন সংশোধন করেছে।
এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation) এলাকায় ৪০ হাজারের বেশি ঠিকা সম্পত্তি রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। যদিও এর মধ্যে নথিভুক্ত মাত্র ৪ হাজার। হাওড়া পুর এলাকায় বাস্তবে অস্তিত্ব থাকা ঠিকা সম্পত্তি প্রায় ১০ হাজার। বহু জায়গায় ঠিকা জমিতে বাজার চলছে, রয়েছে বস্তিও।
তবে বস্তির জায়গায় বহুতল নির্মাণ করে গরিব মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়ার সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণে সমস্যা হচ্ছিল ঠিকা সম্পত্তি হওয়ার কারণে। প্রশাসনের বক্তব্য, এ বার ঠিকা কন্ট্রোলারের নিয়ন্ত্রণ ভূমি রাজস্ব দপ্তরের বদলে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের হাতে যাওয়ার ফলে আইনি প্রক্রিয়া সহজ হবে।