Calcutta High Court : দানপত্রে নেই ভরণপোষণের শর্ত, বৃদ্ধ বাবাকে জানিয়ে দিল আদালত – calcutta high court informed that sons are not obtained to take all responsibilities of parensts


অমিত চক্রবর্তী
দানপত্রের চুক্তি, না আজীবনের ভরসা – কোনটা সত্য? সত্তর পেরিয়ে কোন বিশ্বাসে ভরসা রাখবেন বিশ্বনাথ গঙ্গোপাধ্যায়? হাবড়ার অশোকনগরের বিশ্বনাথ রুপোলি পর্দার রাজ মালহোত্রা নন। তাঁর লেখা কেউ ‘বাঘবান’ নামে ছাপাবে না। তা ছাড়া অনাদরে হলেও রাজ ও তাঁর স্ত্রী পূজাকে সন্তানরা অন্তত রেখেছিল কাছে। বলা যায়, রজনীকান্তের ‘ত্যাগী’ ছবির সঙ্গে বিশ্বনাথের ঘটনার সামান্য হলেও মিল আছে। সেখানে ছোট দুই ছেলে দাদাকে ভুল বুঝিয়ে বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছিলেন। বিশ্বনাথের অভিযোগ, বড় ছেলে তাঁকে ভুল বুঝিয়ে দোতলা বাড়িটাই দানপত্রে লিখিয়ে নিয়েছেন নিজের নামে! ভুল ভাঙার পর সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার আইনে দানপত্র খারিজের জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানান বিশ্বনাথ। জেলাশাসক দানপত্র খারিজ করে দেন। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বড় ছেলে বিপ্লব মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চে তার শুনানি চলে। বেশ কয়েক দফা শুনানির পর গত সপ্তাহে জেলাশাসকের দানপত্র খারিজের নির্দেশ বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। আদালতের যুক্তি – দানপত্রে কোথাও লেখা ছিল না যে এর বিনিময়ে বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন বা বাসস্থানের নিরাপত্তা দেবেন ছেলে। পাশাপাশি স্মরণ করানো হয়েছে বাবা-মাকে দেখভালের প্রসঙ্গও।

Habra To Kalyani Bus Route : এক বাসে হাবড়া থেকে কল্যাণী, নয়া রুটের টাইম টেবিল জানুন
হাইকোর্টের রায়ের পর প্রবীণ নাগরিকদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক আইনজীবী। সন্তানস্নেহে ও তাঁদের ভরসায় অন্ধ হয়ে শেষ জীবনের সব সম্বল লিখে দেওয়ার আগে ভেবে দেখুন – ‘লাগে রহো মুন্নাভাই’য়ের সেকেন্ড ইনিংস হাউজে ঠাঁই নিতে হবে না তো? অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বিশ্বনাথ গঙ্গোপাধ্যায় গড়ে তুলেছিলেন দোতলা বাড়িটা। দু’টি তলায় দুই ছেলের পরিবারকে নিয়ে সংসার ছিল ভরা। বিশ্বনাথের বড় ছেলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য সস্ত্রীক বৃদ্ধ বাড়ির দোতলাটি দানপত্র করে তাঁকে দিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। তিন বছরের মাথায় ভুল ভাঙে তাঁর। সত্তরোর্ধ বৃদ্ধের অভিযোগ, প্রোমোটার এনে বড় ছেলে পুরো বাড়িটাই প্রোমোটিংয়ের জন্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিশ্বনাথ বোঝেন, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বড় ছেলে দানপত্র করে লিখিয়ে নিয়েছেন গোটা বাড়িটাই।

Habra Fire: মেয়ের বিয়ের জন্য তাকে গোঁজা ৫০০-র নোটগুলো পুড়ে ছাই! বুকফাটা হাহাকারে ভারি হাবড়ার আকাশ-বাতাস
বর্ষীয়ান নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ২০০৭ সালে কেন্দ্র বিশেষ আইন তৈরি করেছে। যে আইনের মূল ভিত্তি ছিল, বাবা-মায়ের ভরণপোষণ, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বৃদ্ধের আইনজীবী জুঁই দত্ত চক্রবর্তীর যুক্তি, ‘২০০৭-র বিশেষ আইনে এই বিচার হয়েছে। সেখানে বর্ষীয়ান নাগরিকদের ভরণপোষণ, নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই আইনে মামলা হলে আলাদা করে দানপত্রে সন্তানের দেখভালের চুক্তি কথা লেখার সুযোগ নেই।’ তাঁর আরও দাবি, বিশেষ আইনে যেহেতু ওই মামলা হয়েছিল, সেখানে একজন প্রবীণ নাগরিককে ভুল বুঝিয়ে সই করানো হয়েছে। তাঁকে বঞ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে বিচার পেতে যদি ওই বৃদ্ধকে বছরের পর বছর নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা চালিয়ে আর্থিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়, তাহলে তাদের জন্য তৈরি বিশেষ আইনের উপযোগিতা কোথায়! যদিও মামলাকারী বড় ছেলে বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের আইনজীবী ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘ছোট ছেলেকে বাবা স্বেচ্ছায় তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য টাকাপয়সা দিয়েছেন ও বড় ছেলেকে লিখে দিয়েছেন বাড়িটি। বড় ছেলে তো বাবা-মায়ের যাবতীয় দেখভালও করেন।’ প্রশ্নটা যদিও কেবল দেখভালের নয়। বৃদ্ধকে যদি তাঁর বাড়ি থেকে কোনওদিন বের করে দেওয়া হয়, তা হলে ঠাঁই হবে কোথায়?

East Bengal : ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারের পা বাদ যাওয়ার আশঙ্কা! চিকিৎসার খরচ জোগাতে আয়োজন বিশেষ ম্যাচের
আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টেরই বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রতীক ধরের মতে, ‘বিশেষ আইন তৈরি হয়েছে মানেই তা শেষ কথা নয়। ভবিষ্যতে হয়তো এমন মামলাকেই অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে। যদিও এই মামলার রায়ে আইনের সঙ্গে মানবিক – দু’টি দিকই ধরা পড়েছে।’ তবে প্রতীকের পরামর্শ, এই রায় বাবা-মায়েদেরও আরও সচেতন করতে পারে। আর এক বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রমিত রায় বলেন, ‘রায় পড়ে যা বোঝা যাচ্ছে, হিন্দু আইনে উইল না করলেও সন্তানই বাবার সম্পত্তি পাবেন। তারপরেও দানপত্র করা হলো কেন, এই বিষয়টি আদালতকে দেখানোর আরও সুযোগ ছিল। আদালত আইনের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তা ছাড়া, প্রবীণ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্যও মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত। বিষয়টি কেবল আইনি দিকেই থেমে নেই। এর সামাজিক দিকটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক থেকে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? কলকাতার একটি কলেজের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অংশুমান সরকার বলেন, ‘বাবা-মায়েদের বোঝা উচিত যে ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে গেলে শাসন করারও দরকার রয়েছে। না হলে একটা সময়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাকি পরিচিতদের ফারাকই করতে পারবে না তারা। কেবলই ভালোবাসা ও প্রশ্রয়ের জেরে শেষ পর্যন্ত এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *