কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উন্নতি করেও ফের পিছিয়ে পড়েছে এই রাজ্য। কিছুটা সচেতনতা আর অনেকটা সরকারি নজরদারির জোড়া প্রভাবে নারী-পুরুষ লিঙ্গ-অনুপাতে বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছিল বাংলায়। সাত বছরেই দেখা গিয়েছিল, প্রতি হাজার পুত্রসন্তানের নিরিখে কন্যাসন্তান জন্মানোর হার ৯৩৩ (২০১১) থেকে বেড়ে ৯৪১ (২০১৬) ও ৯৪৪ (২০১৭) হয়েছে। কিন্তু সেই সাফল্য ধরে রাখা গেল না। এখন দেখা যাচ্ছে, ২০২০-তে এই অনুপাত বাংলায় হয়েছে ৯৩৬। অর্থাৎ, দেশের ক্ষেত্রে তিন বছরে এই পরিবর্তন যেখানে ৩, সেখানে বাংলার ক্ষেত্রে তিন বছরে এই অনুপাতের পরিবর্তন -৮!
এই নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা স্বভাবতই দুষছেন কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকেই। চিকিৎসকদেরও একাংশের অনুমান, আল্ট্রসোনোগ্রাফি-সহ উন্নত নানা প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে সমাজের একাংশ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে আইনকে এবং চোরাগোপ্তা ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করিয়ে গর্ভেই মেরে ফেলছে কন্যাভ্রূণকে। তাই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব কঠোর অবস্থান নিতে পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে পিসি-পিএনডিটি (প্রি-কনসেপশন অ্যান্ড প্রি-নেটাল ডায়গনস্টিক টেকনিক্স) আইন নিয়ে। লক্ষ্য হলো, যাতে এই পিসি-পিএনডিটি আইনের নজরদারির ফাঁক গলে চিকিৎসক ও টেনকিনিশিয়াদের একাংশ নানা রকম পরীক্ষা করে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ পরিচয় জানিয়ে দিতে না-পারেন ভ্রূণের লিঙ্গ জানতে ইচ্ছুক দম্পতিদের।
তবে শুধু বাংলা নয়, প্রতি হাজার পুত্রসন্তানের নিরিখে কন্যাসন্তান জন্মানোর ব্যাপারে আরও খারাপ ছবি দেখা যাচ্ছে দিল্লি (৮৬০), মহারাষ্ট্র (৮৭৬), তেলঙ্গানা (৮৯২) ও মধ্যপ্রদেশেও (৯১৯)। যদিও গত তিন বছরে সব চেয়ে বেশি অবনতি বাংলার পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশেই। বাংলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই রাজ্যের অবস্থা সার্বিক ভাবে অতটা খারাপ না-হলেও গত তিন বছরে যে ভাবে দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি অবনতি দেখা গিয়েছে, তাতে বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বক্তব্য, পরিস্থিতির উন্নতিতে পিসি-পিএনডিটি আইনের আওতায় আরও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোই একমাত্র পথ।