TMC : ২ তৃণমূল নেতা-সহ ৪ গ্রেফতার পূর্ব মেদিনীপুরে – east medinipur 4 tmc leaders arrested for involving illegal activities


এই সময়, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরে (East Medinipur) এক দিনে গ্রেপ্তার চার জন। ধৃতদের মধ্যে দু’জন তৃণমূলের নেতা (TMC Leader), এক জন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা। চতুর্থ জন ঠিকাদার। দুর্নীতির অভিযোগে মেচেদার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এসকে সেলিম আলিকে (SK Selim Ali) বুধবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিনে হলদিয়ার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলার (TMC Councillor) প্রশান্ত দাসকে ‘প্রতারণা’র অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূলের তমলুক (Tamluk) সাংগঠনিক জেলার বহিষ্কৃত নেতা দিবাকর জানাকেও পুলিশ বুধবার গ্রেপ্তার করা করেছে। ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ জনতার একাধিক অভিযোগের জেরে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার শান্তিপুর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এসকে সেলিম আলিকে মঙ্গলবার পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই নির্দেশ পেয়ে রাতেই নেতৃত্বের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান ওই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তবে ইস্তফা দিয়েও তিনি শেষরক্ষা করতে পারলেন না। বুধবার রাতে সেলিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

হলদিয়ার (Haldia) কারখানায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এ দিনই প্রশান্ত দাসকে গ্রেপ্তার করে। একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রশান্ত টাকা নিয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই অভিযোগেই হলদিয়া পুরসভা এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলার প্রশান্তকে পুলিশ এ দিন গ্রেপ্তার করে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বোল্ডার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে এ দিন শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দিবাকর জানা গ্রেপ্তার হয়েছেন। দিবাকর তৃণমূল থেকে আগেই বহিষ্কৃত হন। শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের জয়দেব বর্মন থানায় দিবাকরের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। রাস্তা নির্মাণের বোল্ডার আত্মসাৎ করা হয়েছে, দায়ের করা হয়েছিল এমন অভিযোগ। তদন্তকারীদের দাবি, দিবাকর ও সেলিমের একসঙ্গে ঠিকাদারির কারবার রয়েছে।

Purba Medinipur : দুর্নীতির অভিযোগে ‘চুপ’, দলীয় নির্দেশ আসতেই পদত্যাগ পঞ্চায়েত প্রধানের
ঘটনাচক্রে, এ দিনই কাঁথির ঠিকাদার রামচন্দ্র পণ্ডাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অধিকারী পরিবারের ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী যে সময়ে কাঁথি পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সময়ে এই ঠিকাদার রাঙামাটির শ্মশান কেলেঙ্কারির স্টল-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, এমনটাই তৃণমূলের অভিযোগ। তৃণমূলের দুই নেতা ও বহিষ্কৃত এক নেতার পর পর গ্রেপ্তারি নিয়ে শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতির প্রতি জি়রো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, সেখানে সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসন তার মতো পদক্ষেপ করেছে।’ কয়েক মাস আগে হলদিয়ার সভায় পূর্ব মেদিনীপুরে ‘এক ডাকে অভিষেক’ কর্মসূচি চালু করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলের কোনও নেতার বিরুদ্ধে যদি ঠিকাদারি-সহ কোনও দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, তা হলে ‘এক ডাকে অভিষেক’ কর্মসূচির টোল ফ্রি নম্বরে তা জানাতে বলেন অভিষেক। ওই কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার পর তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়তে থাকে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

Pradhan Mantri Awas Yojana : আবাস যোজনায় দুর্নীতি বিরোধী মিছিলে বাম-বিজেপি? শোরগোল হুগলিতে
কিছু দিন আগে কাঁথিতে সভা করতে যাওয়ার পথে মারিশদা গ্রামে গাড়ি থামিয়ে গ্রামে ঢুকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিষেক। গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনে সে দিন সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম আলি অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ মানতে চাননি। মেচেদার ওই তৃণমূল নেতা বুধবার দাবি করেন, ‘আমি দশ পয়সারও দুর্নীতি করিনি। সবাইকে নিয়ে পঞ্চায়েত চালিয়েছি। একাধিক পদে ছিলাম, একটা পদ ছাড়লাম। বিডিও, দলের জেলা সভাপতির কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তৃণমূলে আছি।’ সেলিমের এ-ও দাবি, তিনি দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে নয়, শারীরিক কারণে পদত্যাগ করেছেন। প্রশান্ত দাসও দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়।

Trinamool Congress : ফ্লপ ‘নন্দকুমার মডেল’, ফের পূর্ব মেদিনীপুরে সমবায় দখল তৃণমূলের
ধৃত দুই তৃণমূল নেতা এই সব দাবি করলেও মেচেদার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, সেলিম আলি যথেষ্ট প্রভাবশালী, তাঁর প্রধান ব্যবসা ঠিকাদারি। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের ঠিকাদারি থেকে আইএনটিটিইউসি-র (INTTUC) নামে তোলাবাজি ও কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূলেরই একাংশের বক্তব্য যে, সেলিম প্রচুর সম্পত্তির মালিক। তৃণমূলের ওই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, পৈতৃক সম্পত্তি ছাড়াও স্বনামে ও বেনামে ৬০-৭০টি জমির মালিক তিনি। তৃণমূলের তরফে আরও অভিযোগ, মেচেদা এলাকায় দু’টি বাড়ি ছাড়াও সেলিমের একাধিক বাড়ি রয়েছে অন্যত্র। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আইএনটিটিউসি সভাপতি শিবনাথ সরকার এ দিন বলেন, ‘সেলিম আলিকে কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার ন্যাশনালিস্ট ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ এই গ্রেপ্তারি নিয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের কাছে তৃণমূলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে নাটক চলছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *