কী ভাবে কাজ করবে এই আরভিএম?
সর্বাধিক ৭২টি নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রোগ্রামিং করা যাবে যন্ত্রটিতে। ভোটারের নাম যে কেন্দ্রে, তিনি বোতাম টিপলে সেই কেন্দ্রের প্রার্থিতালিকা ও তাঁদের প্রত্যেকের প্রতীক ভেসে উঠবে তাঁর চোখের সামনে। এর পর তিনি পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। সেই জন্য বর্তমানে সরকারি কর্মীদের জন্য যেমন পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়, তেমনই রাজ্যের বাইরে থাকা ওই ভোটারদের নামে ই-ব্যালটের ব্যবস্থা করা হবে। এখনও পর্যন্ত যেটা জানা যাচ্ছে, কোনও সাধারণ ভোটকেন্দ্রে বা কোনও সরকারি অফিসে কঠোর নিরাপত্তায় থাকা আরভিএমে ভোট দেবেন বিভিন্ন রাজ্যের পরিযায়ীরা। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর প্রয়োজনীয়তা কথা স্বীকার করলেও ব্যবস্থা কতটা সুরক্ষিত, তা যাচাই করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোট দেন না। তাঁদের একটা বড় অংশই পরিযায়ী শ্রমিক। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৬৭.৪ শতাংশ। এই তথ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন কমিশন। এক বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, নতুন কোনও ঠিকানায় বাসা বাঁধলেও বেশির ভাগ ভোটার তাঁদের পুরোনো ঠিকানা বদল করতে চান না। তবে এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় সমস্যার কারণ, ভিন রাজ্যের বাসিন্দা, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা ঠিকঠাক জানতে না-পারা। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। তাই, ভোটে যাতে তাঁরা অংশ নেন, সেটা নিশ্চিত করতেই নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ।সূত্রের খবর, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই আরভিএম মেশিন তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন আগামী ১৬ জানুয়ারি এই মেশিনের কার্যকারিতা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর পর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মতামত লিখিত ভাবে জানাতে হবে। এই রিমোট ভোটিং মেশিনের ভাবনাকে কার্যকর করতে গেলে কী কী প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ করতে হবে, তার তালিকাও প্রস্তুত করে ফেলেছে কমিশন।
সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে ১০ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। সে সবের আগেই নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন এক গুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে। প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে ভালো উদ্যোগ, কন্যাকুমারীতে বসে কেউ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু ব্যবস্থাটি যেহেতু প্রযুক্তি-নির্ভর, তাই অনেক কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা, এই প্রযুক্তি ফুল প্রুফ কি না, সেটার প্রমাণ চাই।’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক বছর ধরেই রিমোট ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় বলে জানাচ্ছেন। সেই মত শোনা হোক। টেকনিক্যাল দিক থেকে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হোক। কারণ, ইভিএম নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আছে।’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা ভালো এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা প্রয়োজন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। কারণ, প্রযুক্তি-নির্ভর এই ব্যবস্থা কোনও ভাবে বিকৃত করা যায় কি না, নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না এবং কেন্দ্রের শাসক দল এর অপব্যবহার করতে পারে কি না- সে সব দেখবেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।’