কলকাতা মানে শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial), হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge), ইন্ডিয়ান মিউজি়য়াম (Indian Museum), কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস (College Street Coffee House), কালীঘাট (Kalighat), দক্ষিণেশ্বর (Dakshineswar Kali Temple), পার্ক স্ট্রিট (Park Street) কিংবা মাদার টেরিজার (Mother Teresa) মিশনারিজ় অফ চ্যারিটির (Missionaries Of Charity) মতো দ্রষ্টব্য জায়গা নয়। কলকাতার (Kolkata) ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোত ফুটপাথের হকারদের তৈরি ‘স্ট্রিট ফুড’ (Street Food)। তাই, আসন্ন জি-২০ সম্মেলন (G 20 Summit) উপলক্ষে শহরে যে সব বিদেশি অতিথি আসবেন, তাঁরা যাতে ফুটপাথের (Footpath) খাবার চেখে দেখতে পারেন, সেই জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ বন্দোবস্ত করছে। রাজ্য প্রশাসনের লক্ষ্য, ওই বিদেশিদের কলকাতার আসল রূপ চেনানো। আর তাঁদের খাবারকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার জন্য সরকারের এই উদ্যোগকে নিজেদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন শহরের হকাররা। হকার সংগঠনের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিনের লড়াই ও বঞ্চনার পর অবশেষে সরকার মেনে নিল, ফুটপাথের হকাররাও কলকাতা শহরের গর্ব!
নবান্ন সূত্রে খবর, জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা মোট ১২০টি দেশের প্রতিনিধিদের জন্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে খোলা জায়গায় স্ট্রিট ফুডের প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হবে। সেখানেই কলকাতা শহরের বাছাই করা হকাররা নানা ধরনের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসবেন। হকাররা কলকাতার ফুটপাথে রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে সব খাবার বিক্রি করেন, সে সবই ঠাঁই পাবে ভিক্টোরিয়ার প্যাভিলিয়নে। যেমন, ঝালমুড়ি, পাপড়ি চাট, পাউরুটি-ঘুগ্নি, মুড়ি, আলুর চপ, বেগুনি, ফুলুরি, শিঙাড়া, চাউমিন, রোল, বিরিয়ানি, মোমোর মতো খাবার। এর আয়োজনের দায়িত্বে রাজ্য পর্যটন দপ্তর। হকার বাছাই করার দায়িত্ব বর্তেছে কলকাতা পুরসভার উপর।
রাজ্য পর্যটন দপ্তরের আধিকারিক সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘একমাত্র কলকাতা শহরেই হকারদের কাছ থেকে খুব সস্তায় গরম, টাটকা খাবার কেনা যায়। বিদেশিদের অনেকেই স্ট্রিট ফুড খেতে পছন্দ করেন। কলকাতার স্ট্রিট ফুডের খ্যাতি জগৎজোড়া।’ তিনি জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের পাশের জমিতে স্ট্রিট ফুডের মোট ২০টি স্টল দেওয়া হবে। বিদেশি অতিথিরা যাতে বসে খেতে পারেন, সেই জন্য চেয়ার-টেবিলও থাকবে। তবে খাবারের দাম বিদেশিদের দিতে হবে না, তাঁদের বিল মেটাবে সরকার।’ হকার বাছাই করা নিয়ে অবশ্য রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছেন পুরকর্তারা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘শহরে কয়েক লক্ষ হকার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ২০ জনকে বেছে নেওয়া আর খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা একই ব্যাপার।’
হকার সংগ্রাম কমিটির সম্পাক শক্তিমান ঘোষ জানাচ্ছেন, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজে়শনের ফুড অ্যান্ড এগরিকালচার অর্গানাইজে়শন এবং অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ-এর যৌথ সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, দুনিয়ার মধ্যে কলকাতার ফুটপাথের খাবার সব চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর। শক্তিমানের কথায়, ‘বিদেশি অতিথিদের কলকাতার স্ট্রিট ফুড খাওয়ানোর যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে, সেটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের।’