মঞ্চে যখন পেশায় আইনজীবী মন্ত্রী ভালোবাসা নিয়ে জোর সওয়াল করছেন, তখন সামনে সারিতে বসা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে অধ্যাপকদের মুখ লাজে কিছুটা রক্তিম। কারও মুখে মুচকি হাসি। কেউ কেউ উত্তেজনায় হাততালিও দিয়ে উঠছেন। থেমে না গিয়ে স্বপন বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি বা না করি, যৌবনে ছাত্রাবস্থার শুরুতেই তো উন্মাদনার সৃষ্টি। সেই উন্মাদনা থেকেই বহু কিছুর সৃষ্টি হয়ে যায়। এখন মন্ত্রী হয়েছি। কিন্তু আমিও তো ছাত্র ছিলাম।’ তাঁর সময়ে মেয়েদের দুটো হস্টেল, আর ছেলেদের চারটে হস্টেল ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যুবক-যুবতীদের একসঙ্গে হাঁটতে দেখলে ভালোই লাগে। আমি তোমায় ভালোবাসি, এটা যদি কেউ বলতে না পারে তবে সে মানুষ নয়। তাহলে তাঁর ভিতরে প্রাণ আছে বলে মনে করি না।’
প্রেমের পরিণতি বিয়ে- এ নিয়ে চিরকালীন দ্বন্দ্বের প্রায় সমাধানও করে দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘ভালোবাসা মানেই বিয়ে নয়। এটা হয় নাকি? আমি আইনের ছাত্র। ম্যারেজ হচ্ছে একটা কন্ট্রাক্ট। ভালোবাসা আর একরকম। বিয়ে না করেও কাউকে ভালোবাসা যায়।’ মন্ত্রী জানিয়েছেন, বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে নয়, বুক চিতিয়ে প্রকাশ্যে প্রেম করতে হবে। ‘কেউ লুকিয়ে প্রেম করে, কেউ গায়ে গা লাগিয়ে বসে প্রেম করে। লুকিয়ে চুরিয়ে বাঁশবাগান, কলাবাগানে ঘুরে বেড়ালে সেখানে দুষ্টুমি করা হয়। খোলামেলা ঘুরে বেড়ালে কীসের ভয়। আমার ছেলেকেও আমি এই কথা বলি।’ বলছেন পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের এই তৃণমূল বিধায়ক।
এর পরে মন্ত্রীর চোখ যায় মঞ্চে থাকা পুরসভার প্রবীণ চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার আর বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক খোকন দাসের দিকে। তাঁদের উদ্দেশেও স্বপন বলেন, ‘আমার এখানে বয়সে প্রবীণ পরেশবাবু আছেন। উনি ভালোবাসার কবিতা বলে গেলেন। খোকনও তো একেবারে যুবক। এখন এঁদের যদি কাউকে ভালোলাগে, আর সেটা যদি প্রকাশ করে, তাহলে সেটা অন্যায় কেন হবে?’ মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে খোকন বলছেন, ‘ভালবাসতে পারলে দেখবেন আপনার চোখে খারাপ কিছু নজরেই আসবে না।’ আর পরেশের মন্তব্য, ‘গৌরাঙ্গই তো আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন, প্রেমই আমাদের গতি। স্বপনবাবু প্রায় ঠিকই বলেছেন শুধু দু’একটি জায়গা ছাড়া।’