Pradhan Mantri Awas Yojana : শুভেচ্ছার আড়ালে বিডিও অনিয়ম ধরলেন আবাসের – pradhan mantri awas yojana final list names are removed because of corruption


রূপক মজুমদার, বর্ধমান
আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। তালিকা থেকে কাটা গিয়েছে বহু উপভোক্তার নাম। কিন্তু যোগ্যদের ক্ষেত্রে টাকা অনুমোদনের পরেও নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে চলছে নজরদারি। আর সেই নজরদারিতে বাদ পড়ছে চূড়ান্ত হওয়া নামও। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকে এ ভাবেই বাদ পড়েছে অনুমোদন পাওয়া ৬৯ জনের নাম। জেলার পর্যবেক্ষকদের মতে, বিডিওর (BDO) নিখুঁত অপারেশনেই সম্ভব হয়েছে এই কাজ। স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রকাশে শেষ মুহূর্তেও আপস করেননি তিনি। সূত্রের খবর, ত্রিস্তর সমীক্ষার পর খণ্ডঘোষ ব্লকে আবাস যোজনায় ৩৩০৮ জনের নাম চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পায়। কিন্তু, সমীক্ষার কাজ চলার সময়েই একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে বিডিও সত্যজিৎ কুমারের কাছে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ৩১ ডিসেম্বর সেই তালিকা প্রকাশ পেতেই পয়লা জানুয়ারি রবিবার শুভেচ্ছা জানাতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। গ্রামবাসীকে নিউ ইয়ার্সের শুভেচ্ছা জানানোর ফাঁকে ১৪টি অনুমোদন পাওয়া বাড়ির দিকে চোখ পড়ে তাঁর। বুঝতে পারেন, তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়া এই অনুমোদনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর পরেই বিডিও বৈঠক করেন ব্লকের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে। তাঁদের জানান, তাঁর একার চোখে যদি ১৪টি ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে দলের বাকি সদস্যরা বেরিয়ে পড়লে আরও গোলমাল ধরা পড়বে।

PM Awas Yojana : ১০ লাখ বাড়ি নির্মাণের সময় বাঁধলেন মুখ্যসচিব
বিডিওর তৈরি করা দলের সদস্যরা কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেলে বেরিয়ে পড়েন। সমবেত চোখে ধরা পড়ে আরও ৫৫টি অনুমোদিত নাম। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনুমোদিত ব্যক্তিদের রীতিমতো বড় পাকা বাড়ির খোঁজ পান তাঁরা। সব মিলিয়ে এমন ৬৯ জনের নাম পাওয়া যায় ব্লকে। এর পরেই ওই ৬৯ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ও তাঁদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ব্লক অফিস থেকে। টাকা অনুমোদনের পরেও তা বাতিল করে রাজ্যে কার্যত নজির তৈরি করেছে এই ব্লক। জেলার পর্যবেক্ষকদের অনুমান, অনুমোদিত তালিকায় একতলা, দোতলা পাকা বাড়ি শুধু পূর্ব বর্ধমানেই রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। ৬৯ জনের তালিকায় রয়েছে ব্লকের নারিচা গ্রামের গোপীকৃষ্ণ ঘোষের নাম। দোতলা বাড়ির মালিক গোপীকৃষ্ণ কী ভাবে আবাস যোজনায় ঘর পেলেন? তাঁর স্ত্রী রিফা ঘোষ বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব। তৃণমূলের লোকেদের ধরেই আমরা ঘর পেয়েছি। এখন কেন সেটাও কেড়ে নিচ্ছেন আপনারা?’ নিজেদের দোতলা বাড়ি হলো কী করে? রিফা বলছেন, ‘বহু ধারদেনা করে বাড়িটা করেছি। টাকা পেলে সেই ধার শোধ করব।’ নিশ্চিন্তপুরের মহম্মদ তাহেবউল্লারও দোতলা বাড়ি। তিনি বলেন, ‘আমরা কাকার বাড়িতে থাকি। কাকার দোতলা বাড়ি। কিন্তু আমরা কোনও ভাবে চালাঘরে দিন কাটাই। আমাদেরও বাড়ি পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’

Pradhan Mantri Awas Yojana : আবাস তালিকার ৮৪% ভরতে হবে বাইশের বাকি ৩ দিনে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আবাস প্লাস যোজনায় জিরো এরর (ত্রুটিশূন্য) নীতি নিয়ে কাজ করতে হবে। খণ্ডঘোষ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ কুমার জানাচ্ছেন, তিনি সেই লক্ষ্যেই কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজের কথা বলেছেন। সরকারি নিয়ম মেনে আমরা আমাদের কাজ করেছি। বাকি যা জানার, তা জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাবেন।’ বুধবার জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কোনও অভিযোগ এলে তার এক শতাংশও যদি সত্যি হয়, তাহলে নাম বাদ যাবে।’ জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক কাজলকুমার রায়ও বলেন, ‘কেউ মিথ্যা বলে, প্রভাব খাটিয়ে নাম তুললে তা কেটে দেওয়া হবে, এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার। এমনকী কারও অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেলেও আমরা তা ফেরত নেব। পাকা বাড়ি থাকলে কেউ বাড়ি পাবেন না। খণ্ডঘোষ ব্লকের মতো অন্য ব্লকের বিডিওরাও সার্ভে করে প্রয়োজনে নাম বাতিল করবেন।’ এমন ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘আমরা এখনও বলছি, স্বচ্ছতা মেনে কাজ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে জেলার প্রতিটি ব্লকে। খণ্ডঘোষ প্রথম যে কাজ করেছে, সেটা সব ব্লক থেকেই হবে। অনুমোদিত তালিকাও সার্ভে করবেন বিডিওরা।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *