‘ক্যাপস’-এর জন্মদিনে অজানা কপিলকে চেনালেন অশোক মালহোত্রা


সব্যসাচী বাগচী 

ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket) একাধিক মাইলস্টোন গড়ে কপিল দেব (Kapil Dev) ৬৪ বছরে পা দিলেন। আর তাঁর সঙ্গে অশোক মালহোত্রার (Ashok Malhotra) বন্ধুত্বের বয়স হল ৫২ বছর। গত ৫২ বছরে ওঁদের সম্পর্ক অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে। দু’জনের সম্পর্কে অনেক টানাপোড়েন এসেছে। অনেক বছর তো কপিলের সঙ্গে কথাই বলতেন ভারতের এই প্রাক্তন ওপেনার। এহেন অশোক মালহোত্রা জি ২৪ ঘণ্টার কাছে তাঁর ‘ক্যাপস’-এর অনেক অজানা দিক তুলে ধরলেন। লেখা ভালো এক অন্য কপিল দেবকে চেনালেন বঙ্গ ক্রিকেটের ‘পাঁজি’। 

১৯৫৯ সালের ৬ জানুয়ারি। এই দিনটায় চণ্ডীগড়ে জন্মেছিলেন ১৯৮৩ সালে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী (1983 World Cup) অধিনায়ক। ‘হরিয়ানা হারিকেন’-এর ৬৪তম জন্মদিনে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে দিলেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক ও প্রাক্তন কোচ। বললেন, ‘আমরা একই দিনে স্কুলের ক্রিকেট দলের ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলাম। সবাই সময়মতো চলে এলেও কপিল অনেক দেরিতে এসেছিল। শুধু তাই নয়। কোচ প্রয়াত দেশপ্রেম আজাদের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য পাঁচিল টপকে মাঠে ঢুকেছিল ও। কিছুক্ষণ অনুশীলন করার পর একটা লেডিজ সাইকেলে চেপে পালিয়ে যায়! আমরা তো এখনও সেই দিনগুলো নিয়ে ভাবলে হেসে লুটোপুটি খাই।’ 

কেমন ছিল কপিলের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্ত? অশোক মলহোত্রা ফের যোগ করলেন, ‘সেই ট্রায়ালে কপিলের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়েছিল। আমাদের থেকে ভালো পারফর্ম করলেও, অদ্ভুত ভাবে দেশপ্রেম আজাদ স্যারের কিন্তু ওকে পছন্দ হয়নি। আমরা মোট আটজন সেই ট্রায়ালে পাস করলেও, কপিল সেই ট্রায়ালে ফেল করে। স্বভাবতই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় ও জায়গা পায়নি। এতে ও ভীষণ অপমানিত বোধ করে। সেই অপমানের বদলা হিসেবে একদিন অনুশীলনে আমাদের স্কুল অধিনায়ককে বাউন্সার মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়! সেটাও আবার দেশপ্রেম আজাদ স্যারের সামনেই ঘটেছিল। এর পর আর স্যার ওকে কোনও দল থেকে বাদ দেননি। 

গুগল তখনও আসেনি। ভারতে রঙিন টেলিভিশনের যুগ শুরু হয়নি। সেই সময় ইমরান খান, স্যার ইয়ান বোথাম, স্যার রিচার্ড হেডলিদের মতো অলরাউন্ডারদের সঙ্গে টক্কর দিতেন কপিল দেব। বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেকে ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু তিনি কি ছোটবেলা থেকেই অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন? 

আরও পড়ুন: Virat Kohli: ২০২২ সালে কোহলির ‘বিরাট’ আয়ের হিসেব জানলে চমকে উঠবেন!

আরও পড়ুন: IND vs PAK: কেন জয় শাহকে কটাক্ষ করলেন পিসিবি প্রধান? জেনে নিন আসল কারণ

অশোক মালহোত্রা ফের বলেন, ‘স্যারের অনুশীলনে ওপেনার ব্যাটাররা নয় কপিল সবার আগে নেটে ঢুকে যেত। শুরু থেকেই ব্যাট চালাত। প্রথমদিকে কপিলের এমন ব্যাটিং দেখে স্যার বকাঝকা দিলেও, পরে আর আটকাতেন না। স্যার বুঝে গিয়েছিলেন যে, কপিলকে ওর ন্যাচরাল ব্যাটিং করতে দিলে সেটা দলের কাজে লাগবে। ব্যাটিংয়ের পরেও ক্লান্ত হত না কপিল। শুধু শীত নয়, প্রচন্ড গরমেও ও টানা ১০-১৫ ওভার বোলিং করে যেত। অথচ পেস ও লাইন-লেংথের তারতম্য ঘটত না। নাগাড়ে বোলিং করতে গিয়ে কপিলের আঙুল কেটে রক্ত ঝরতেও দেখেছি। তবুও ও থামেনি। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপট দেখানোর জন্যই ওর জন্ম হয়েছিল। অদম্য জেদ আর ডেয়ার ডেভিল মানসকিতার জন্যই কপিলের নাম অলটাইম গ্রেটদের তালিকায় থেকে যাবে।’ 

দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্ব হলেও একটা সময় কপিল-অশোক সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। সেই ঘটনা নিয়ে মলহোত্রা অনেক বছর তাঁর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেননি। সেই পুরনো দিনের ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন, ‘১৯৮৩ বিশ্বকাপের আগে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলাম। সেই সফরে টেস্ট দলে জায়গা না পেলেও একদিনের সিরিজে ভাল পারফর্ম করি। স্বভাবতই বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার আশা করেছিলাম। যদিও অধিনায়ক কপিল আমার হয়ে কথা বলেনি। এরপর বিশ্বকাপের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের দেশে এসে সব ফরম্যাটে ভারতীয় দলকে দুরমুশ করে চলে গেল। অথচ সেবার একদিনের সিরিজেও রান পেলাম। জামশেদপুরে একদিনের ম্যাচে ৬৫ রান করার পর কপিল আমার হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি রাগে ফুঁসছিলাম। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি কি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্য নই? কপিলের জবাব ছিল, তোমার উপর ভরসা রাখতে পরিনি। সেই ঘটনার পর অনেক বছর ওর সাথে কথা বলিনি। তবে এখন আর রাগ করে লাভ নেই। কারণ, আমরা দুজনেই এখন বুড়োদের দলে।’  

যত দিন ক্রিকেট থাকবে, ভারত খেলবে, কপিল দেবের নাম শীর্ষ সারিতে লেখা থাকবে। কেরিয়ারে ১৩১ টেস্টে নিয়েছেন ৪৩৪ উইকেট। রান ৫২৪৮। ওয়ান ডে ফরম্য়াটে ২২৫ ম্যাচে ২৫৩ উইকেট। রান ৩৭৮৩। প্রথম শ্রেনির এবং লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ঝুরি ঝুরি উইকেট। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা করে নেওয়া, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ সম্মান। সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বন্ধু কপিল এখনও অশোক মালহোত্রার মনে আলাদা জায়গায় রয়েছেন। এবং থেকে যাবেন। 



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *