দিল্লি-পাঞ্জাবের দিকে পদচিহ্ন রাখলেও চেঙ্গিজ খান বা তাঁর উত্তরসূরিরা কখনও বঙ্গে এসেছেন বলে ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই। কিন্তু চেঙ্গিজের জিন কি বাংলায় প্রভাব বাড়াচ্ছে? প্রশ্নটা অদ্ভুত হলেও সম্প্রতি সদ্যোজাতদের শরীরে মঙ্গোলিয়ন স্পটের খোঁজ বেশি মেলায় এটাই ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। বহু খুদেরই পিঠে-কোমরে নীলচে দাগ বা মঙ্গোলিয়ান স্পট দেখে মা-বাবারা ভাবছেন, সেটা কোনও অসুখের ইঙ্গিতবাহী, না নিছকই দাগ?
এই স্পট হলো পিঠে, কোমরে বা কাঁধে থাকা জন্মচিহ্ন। আকারে জরুলের তুলনায় অনেকটাই বড়। নীলচে, কালচে নীল বা গাঢ় ধূসর সেই বড়সড় ছোপ প্রকট ভাবে চোখে পড়ে অনেক নবজাতকের শরীরে। মঙ্গোলিয়ায় ৯৫% বা তারও বেশি নবজাতক এমন দাগ নিয়ে জন্মায়। কিন্তু বাংলায় বা ভারতে তা মেলে বড়জোর ১০-৩০% ক্ষেত্রে। মঙ্গোলীয় লোকগাথায় কথিত – চেঙ্গিজের জিনের ছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে এই সদ্যোজাতরা। মঙ্গোল সম্রাটেরও নাকি ছিল এই জন্মদাগ।
যদিও বিজ্ঞান জানাচ্ছে, ডাক্তারি পরিভাষায় মঙ্গোলিয়ান স্পটকে বলে কনজেনিটাল ডার্মাল মেলানোসাইটোসিস। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ভ্রূণাবস্থায় মেলানিনের ত্রুটিপূর্ণ বিপাকের জেরেই এই নিরীহ দাগের জন্ম। যা শিশুর জন্মের ১-৬ বছরের মধ্যে নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়। জার্মান বংশোদ্ভুত জাপানি নৃতত্ত্ববিদ আরউইন বালজ ১৮৮৩-তে প্রথম এই স্পটের কারণ ব্যাখ্যা ও নামকরণ করেন মঙ্গোলীয়দের নামে।
সদ্যোজাত রোগ বিশেষজ্ঞ তাপস সোম, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন সরকাররা জানাচ্ছেন, সংখ্যাটা সম্প্রতি বঙ্গে বেড়েছে কিনা, তা নিয়ে সমীক্ষা নেই। কোনও সমস্যা ডেকে আনে না বলে একে তাঁরা তেমন গুরুত্বও দেন না। কিন্তু ইদানীং মা-বাবাদের এই দাগ নিয়ে কৌতূহল ও প্রশ্ন বেড়েছে। তাই ডাক্তাররাও বেশি করে নজর করছেন বিষয়টি। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুরের কথায়, ‘মা-বাবাদের কৌতূহলের কারণে আজকাল হয়তো প্রতি ৫-৭ শিশুতে এটা চোখে পড়ছে। আগে যা ছিল প্রতি ১০ জনে একজন।’ তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই দাগে বিন্দুমাত্র ভয়ের কারণ নেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি বলেন, ‘সন্তানের ত্বকে এত বড় দাগ চিন্তায় ফেলে দেয় অনেক বাবা-মাকে। মনও খারাপ হয়। আমরা আশ্বস্ত করে জানাই, বিষয়টা একেবারেই চিন্তার নয়। কিছু দিন পরে এমনিই মিলিয়ে যাবে।’
এমনটাই ঘটেছে বারাসতের একরত্তি স্বপ্নসমার ক্ষেত্রে। তার মা দীপান্বিতা মিত্রের কথায়, ‘মেয়ে জন্মানোর পর বড়সড় নীলচে দাগটা দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তারবাবু জানালেন, চিন্তার কিছু নেই। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। এখন মেয়ের পাঁচ মাস বয়স। দেখছি দাগটা ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে।’ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কিছু বিপাকজনিত অসুখের সঙ্গে এর খাতায়কলমে সম্পর্ক থাকলেও, তা একেবারেই বিরল। তাই ঘামানো অর্থহীনই।