ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা আজ আছে, কাল নেই- এই কথা কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে (BJP) স্মরণ করিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার সাগরমেলার প্রস্তুতি দেখে কলকাতায় ফেরার সময়ে মমতা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে একশো দিনের কাজ থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PM Awas Yojana)- বিভিন্ন বিষয়ে বিঁধলেন। তাঁর বক্তব্য, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে, ক্ষমতার বলে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিনিধিদল রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে পূর্ব মেদিনীপুরে (East Medinipur) এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘ওরা দিল্লিতে ক্ষমতায় আছে বলে ভাবে, সবাই পরাধীন হয়ে গিয়েছে? ক্ষমতা আজ আছে, কাল নেই। আমি আজকের কথা ভাবি না। কালকের কথা ভাবি।’ কেন্দ্রীয় সরকার যে একশো দিনের কাজে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না, সেই বিষয়ে এ দিন সাগরের হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়িয়ে বলেন, ‘আর কতবার বলতে হবে, টাকা দেওয়ার জন্য? কেন্দ্র টাকা না-দেওয়ায় এই প্রকল্পের জব কার্ড হোল্ডারদের দিয়ে রাজ্য সরকার আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৫০ লক্ষ শ্রমজীবী তৈরি করেছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত হয়েছে। আবাস যোজনায় ১৭ লক্ষ আবেদন বাদ দিয়েছি। ক্ষমতায় আছে (বিজেপি) বলে এ টিম, বি টিম, সি টিম পাঠাচ্ছে।’
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘বিজেপি নেতারা দোতলা, তিনতলা বাড়ি করেছে। তাদের নামও তালিকায় ছিল। কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে আগে ছিল। একটা জেলায় অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করছি। সরকারি স্তরে যদি কারও ভুল থাকে, তা হলে পদক্ষেপ করা হবে।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, নাম না-করলেও মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের দিকে। আবাস তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুর্নীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনিও পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১ নম্বর ব্লকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘ভগবানপুর একটি উদাহরণ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার ৩৪২টি ব্লকের ৩২২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আবাস যোজনার বাড়ি প্রাপকদের তালিকা খতিয়ে দেখলে এই সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।’ আবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন বলেন, ‘শুভেন্দুবাবু তৃণমূলে থাকার সময়ে শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের অনেক জেলারই পর্যবেক্ষক ছিলেন। যেখান থেকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে, সেখানেই কেন্দ্রীয় টিম যাবে।’
একশো দিনের কাজে ভুয়ো জব কার্ড তৈরি হয়েছে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। যদিও মুখ্যম্যন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘২০ লক্ষ ভুয়ো কার্ড রয়েছে, এমনটা ওঁরা (বিরোধীরা) বলছেন বলে শুনছি। এর সত্যতা জানা নেই। এ রকম কোনও তথ্য নেই। আর যদি থাকেও, তা হলে তার দায় কেন্দ্রের। ওরা তো সরাসরি মজুরি মেটায়। রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘উত্তরপ্রদেশে ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা ৬৯ লক্ষ। মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, কর্নাটকে কত? ওই সব রাজ্যে তো বিজেপির সরকার। সেখানে অন্য নিয়ম কেন? এখন তো শুনছি, কাজু বাগানের মালিককে আয়কর দপ্তরের কথা বলে ভয় দেখানো হচ্ছে!’ বিজেপিকে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যদি কেউ ঘুমিয়ে থাকে, তা হলে একবার তো ঘুম ভাঙবেই। ওদের ঘুম না-ভাঙলেও ওরা চলে যাবে। নতুন সরকার আসবে।’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘ঘুম অনেকেরই ভাঙবে। কিন্তু তৃণমূল চলে যাবে চিরনিদ্রায়।’