চার মাস হয়ে গিয়েছে কলেজে-কলেজে স্নাতকের প্রথম সেমেস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। নভেম্বরে মিটে গিয়েছে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) হিসেবে এখনও ২৭০০ এমন ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হলেও রেজিস্ট্রেশন (Registration) করাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৪০টি কলেজকে তাই কড়া নির্দেশে বলা হয়েছে, ১০ জানুয়ারির মধ্যে এই পড়ুয়াদের খুঁজে বের করে রেজিস্ট্রেশন করাতেই হবে। নইলে তাঁদের ফেব্রুয়ারিতে প্রখম সেমের (First Semester) পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। কলেজগুলি সেই পড়ুয়াদের খুঁজতে গিয়ে দেখছে, এঁদের অনেকেই ‘ভুতুড়ে’। ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু খোঁজ মিলছে না। এঁদের একাংশ আবার মার্কশিট, জাতিগত শংসাপত্র, মাইগ্রেশন সার্টিফিকেটের (Migration Certificate) মতো জরুরি কাগজপত্রের আসল প্রতিলিপিও দেখাতে পারছেন না। ফলে কলেজের ভর্তি-প্রক্রিয়া নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে সন্দেহ। অভিযোগ উঠছে দুর্নীতিরও। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘ইন্টারনেটের সমস্যা বা অন্য কোনও বৈধ কারণ ছাড়া যদি দেখা যায় ভর্তি হওয়ার পরেও কেউ মার্কশিট বা অন্যান্য জরুরি তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারছেন না, তা হলে তো দুর্নীতি বা ভুয়ো ভর্তির অভিযোগ ওঠাই স্বাভাবিক। কলেজের সিট বিক্রির লজ্জার অতীত কি আমরা ভুলে গেছি?’
অধ্যক্ষদের একাংশও জানাচ্ছেন, এমন কিছু ছাত্রছাত্রী আছেন, যাঁরা ভর্তির অনলাইন প্রক্রিয়ার সময় নম্বর বাড়িয়ে ভর্তি হয়েছেন। অথচ রেজাল্টে দেখা যাচ্ছে তাঁরা ওই বিষয়ে আদতে অনেক কম নম্বর পেয়েছেন। এজেসি বোস কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি জানান, তাঁর কলেজে ১৬৫ জন প্রথম বর্ষের এমন পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন হয় ব্লক, নয়তো ভ্রান্তিতে ভরা। ওই ১৬৫ জনের মধ্যে ১০০-র বেশি এমন ছাত্রছাত্রী আছেন, যাঁরা উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিটের কপি যথাযথ ভাবে দেখাননি। বার বার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিফল হতে হচ্ছে। মণীন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানাচ্ছেন, তাঁর কলেজে এমন ১২০ জন পড়ুয়া ছিলেন, যাঁদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। অনেক চেষ্টার পরেও ৪০-৪২ জন রয়ে গিয়েছেন, যাঁরা অরিজিনাল ডকুমেন্ট দেখাতে পারছেন না অথবা যে নথি তাঁরা আপলোড করেছেন তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘ভুল তথ্য দিয়ে অথবা অসত্য কথা বলে ভর্তি হয়ে থাকলে এই প্রক্রিয়ায় আটকে যেতে হবেই।’ প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে পুরোপুরি অনলাইনেই ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে।
কয়েকটি কলেজের বক্তব্য, ফি বছরই রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নানা গোলমাল হয়। কিন্তু এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর এক সঙ্গে আটকে যাওয়া বেনজির। বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডুর মতো অনেকে আবার জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে অনেকে এসেছেন রেজিস্ট্রেশন করাতে। অনেক সময় এমনও হয়েছে একই ছাত্র একাধিক কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ফলে নানা কলেজে তাঁর নাম রয়ে গিয়েছে। তাই রেজিস্ট্রেশন হয়নি। আবার শিক্ষামহলের অনেকের অভিযোগ, কলেজে ভর্তি হয়েও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই আর্থ-সামাজিক কারণে একাংশ ছেলেমেয়ে কলেজ-ছুটও হচ্ছেন। ২৭০০-র ‘ভুতুড়ে’ সংখ্যায় এমন হদিশও মিলতে পারে বলে তাঁদের মত।