কুম্ভমেলা পেয়েছে। তবে ঐতিহ্য ও প্রাচীনত্ব থাকা সত্ত্বেও গঙ্গাসাগর মেলার জন্য কেন্দ্রের কাছে বারবার দরবার করেও ‘জাতীয় মেলা’র তকমা মেলেনি। তাই সাগরমেলাও যাতে কলকাতার দুর্গাপুজোর মতো ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’-এর তকমা পায়, সে জন্য এবার সরাসরি ইউনেস্কোর দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য।
প্রাথমিক ভাবে স্টাডি পেপার তৈরির জন্য নথি সংগ্রহের কাজ রাজ্য নিজেই শুরু করে দিয়েছে। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে এই সম্মান এনে দেওয়ার প্রাথমিক কাজ সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের তপতী গুহঠাকুরতা ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছিলেন। সাগরমেলার জন্য নবান্ন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরকে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি অফিসার পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে। আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ, স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নথি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। মতামত নেওয়া হচ্ছে বিদ্বজ্জনেদের। গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো সাগরমেলার প্রাচীনত্ব, ঐতিহ্য সর্ম্পকিত খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব যাচাই করা হচ্ছে। সাগরদ্বীপের অবস্থান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক স্টাডি রিপোর্ট করতে হবে। ২০২৪ সালে এই ইউনেস্কোতে আবেদন করা হবে।’
এখনও পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ৪৩০ খৃষ্টাব্দে কপিলমুনির মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু তার আগেও ভগীরথ ও সাগর রাজাকে নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনি পাওয়া যায়। কালিদাসের রঘুবংশে সাগরমেলার কথা পাওয়া যায়। রামায়ণ, মহাভারতের যুগেও এই মেলার উল্লেখ রয়েছে। আরও বেশ কিছু তথ্য সরকারি আধিকারিকদের হাতে এসেছে। সব খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা।
কালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাগরমেলার বিবর্তনও হয়েছে। ভাঙনের গ্রাসে মন্দির বার বার চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। নতুন করে গড়ে উঠেছে মন্দির। তবুও হারায়নি এর ধারাবাহিকতা, ঐতিহ্য। প্রতিবছর নিয়ম করে মকর সংক্রান্তিকে সামনে রেখে গঙ্গা মোহনায় দুর্গম এই দ্বীপে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হচ্ছে। বর্তমান গঙ্গাসাগর দ্বীপের আয়তন ৩০০ বর্গ কিলমিটার। যার যাত্রাপথও দুর্গম। স্থলপথে যোগাযোগ নেই। জলপথেই পৌঁছাতে হয়। সেজন্যই বলা হয়, ‘সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার’। তার পরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ সাধু-সন্ত, তীর্থযাত্রী ছুটে আসছেন বছরের পর বছর। এই বিপুল সংখ্যা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ধর্মীয় পর্যটনের। এখন ইউনেস্কোর স্কীকৃতি জুটলে এর সংরক্ষণের পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক পর্যটনের প্রচারেও বাড়তি গুরুত্ব পাবে। যেমনটি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো।