শনিবার বিচার ভবনে CBI-ED-র বিশেষ আদালতের এজলাস থেকে বেরিয়ে আইনের ছাত্র মানিক ভট্টাচার্য তাঁর আইনজীবীদেরই কার্যত আইনের ক্লাস নেন। কেন তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের হাজিরাকে আত্মসমর্পণ বলা হচ্ছে, কেন তাঁদের হয়ে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলেন, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এজলাসের বাইরে আইনজীবীদের ডেকে মানিককে বলতে শোনা যায়, “দয়া করে এমন কিছু করবেন না, যাতে আমার পরিবারকে জেলে যেতে হয়। হাতজোড় করে বলছি। আমি আইনের এক জন ছাত্র। আদালত সমন পাঠিয়েছে বলে ওঁরা হাজিরা দিয়েছেন। সেখানে কেন আপনারা বেল পিটিশন করলেন?” মানিককে কোনও রকমে শান্ত করেন আইনজীবীরা। পরে মানিকের আইজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, “আসলে ED-র আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তাই, এক মাস সময় পেয়েও শুনানির জন্য ওরা আরও সময় চাইছে।”
মানিককে গ্রেপ্তার করার পর পরই ED তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম দুর্নীতির ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে আনে। ED-র অভিযোগ, মানিকের স্ত্রী শতরূপার সঙ্গে এক জন মৃত ব্যক্তির যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। আবার বিএড-ডিএলএড (B.Ed.-DELEd) কলেজগুলিতে অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো গড়ে তোলার নাম করে মানিক-পুত্র সৌভিকের অ্যাকাউন্টে প্রায় আড়াই কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের। সৌভিকের অধীনে থাকা দু’টি সংস্থার নামও এই মামলায় প্রকাশ্যে আনা হয়। নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় কিছু দিন আগে ১৫৯ পাতার একটি চার্জশিট জমা দেয় ইডি। যেখানে মানিক ছাড়াও তাঁর স্ত্রী, পুত্র এবং তাপস মণ্ডলের নাম ছিল। সৌভিকের ওই দুই সংস্থারও নাম রাখা হয়েছিল চার্জশিটে।
এ দিন আদালতের সমন পেয়ে আদালতে উপস্থিত হন শতরূপা ও সৌভিক। কোর্টে ছিলেন তাপসও। তাঁরা প্রত্যেকেই জামিনের আবেদন করেন। সেই আবদনের তীব্র বিরোধিতা করে ইডি। তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ আরও একবার তুলে ধরা হয় আদালতের সামনে। একই সঙ্গে তিন জনের ১৪ দিন জেল হেফাজত চাওয়া হয় মৌখিক ভাবে। আবার একাধিক বেসরকারি ডিএলএড (DELEd) কলেজের মালিক তাপস মণ্ডলের বিরুদ্ধে ED-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, “নো তাপস, নো মানিক। অর্থাৎ তাপস না-থাকলে মানিক থাকতেন না। আবার উল্টোটাও ঠিক। তাপস মণ্ডল যদি না-থাকতেন, তা হলে এই গোটা ক্রাইমটাই হতো না। কারণ, মানিকের পক্ষে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের খোঁজা সম্ভব ছিল না।”
এডুলজির অভিযোগ, তাপসই চাকরিপ্রার্থীদের খুঁজে এনেছিলেন টাকার বিনিময়ে চাকরির জন্য। যদিও তাপসের আইনজীবী এর তীব্র বিরোধিতা করে জানান, ED যতবার তাঁকে ডেকেছে, তত বারই তিনি গিয়েছেন, তদন্তে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করেছেন, তার পরেও কেন জেল হেফাজত চাওয়া হচ্ছে?