জনসংযোগে জোর দিতে ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ (Didir Suraksha Kawach) কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে থাকবেন তৃণমূলের নেতারা (TMC Leaders)। দলের এই তাবড় নেতারা কোথায় থাকবেন, সেটা ঠিক করছেন নিচুতলার কর্মীরাই। এবং অঞ্চল ও বুথকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) পরিচালনায় থাকা তৃণমূলের বিশেষ একটি দল নেতাদের এই গ্রাম সফরের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। নেতারা গ্রামে গিয়ে কোন কর্মীর বাড়িতে রাত কাটাবেন, সেটা ওই অঞ্চলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট করেছে এই টিম। যাদের সহায়তা করছে একটি ভোটকুশলী সংস্থা। পাশাপাশি এই অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নেতার কর্মসূচির সার্বিক রুট-ম্যাপ। ‘অতিথি নেতা’ কোন বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন, কোনও বুথের অন্তর্গত অঞ্চলের কোন কোন পাড়ায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলবেন, কোথায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে স্থানীয় সভা করবেন – সে সবই তৃণমূলের আঞ্চলিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করেছে অভিষেকের তত্ত্বাবধানে থাকা এই টিম। সেই অনুযায়ী তৃণমূলের যে সাড়ে তিনশো নেতানেত্রী ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ কর্মসূচিতে গ্রামে গ্রামে যাবেন, তাঁদের রস্টার ও রুট-ম্যাপ তৈরি হয়েছে।
আগামী ১১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে এই কর্মসূচি। যে নেতারা যাবেন, তাঁদের কাছে দফায় দফায় রস্টার ও রুট-ম্যাপ পৌঁছে যাবে। কিন্তু রস্টার ও রুট-ম্যাপ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াটি ওই সাড়ে তিনশো নেতার কাছে গোপন রাখা হয়েছে বলে জোড়াফুল নেতৃত্বের একাংশের দাবি। তাই কোন জেলার কোন গ্রামে যেতে হবে, সে সংক্রান্ত সূচি কবে আসবে, সে দিকেই আপাতত তাকিয়ে আছেন তৃণমূলের অনেক ‘হেভিওয়েট’ নেতা। জোড়াফুল শিবিরের এক সাংগঠনিক জেলার সভাপতির কথায়, ‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথমে জেলার ব্লক নেতাদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর বাছাই করা অঞ্চল-বুথ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এই প্রতিনিধিরা কথা বলেন। কোন বাড়িতে অতিথি নেতা থাকবেন, সেটা সেখানেই ঠিক হয়েছে। পাশাপাশি কোথায় মধ্যাহ্নভোজ সারবেন, কোন এলাকায় যাবেন, ঠিক করা হয়েছে তা-ও। সারপ্রাইজ ভিজিট কোথায় হবে, একমাত্র সেটাই স্থানীয় নেতাদের জানানো হয়নি।’
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সংগঠনের অন্দরে নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের দপ্তরে প্রতিটি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘অভিষেক দায়িত্ব নেওয়ার পর যে কাঠামো তৈরি করেছেন, সেখানে প্রতি সাংগঠনিক জেলার জন্য একজন ‘পার্সন টু কনট্যাক্ট’ নামে বিশেষ প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন কাজকর্ম এঁরা মনিটরিং করেন। অভিষেকের দপ্তর থেকেই কাজ করেন এঁরা। কোনও নেতা জেলায় কর্মসূচিতে গেলে তিনি কোথায় সভা করবেন, কোথায় থাকবেন, জেলা-নেতৃত্বের তরফে কারা সেই রাজ্য নেতাকে রিসিভ করবেন, সে সব খুঁটিনাটি ঠিক করেন এই বিশেষ প্রতিনিধিরা। দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে গ্রামে-শহরে যে নেতারা যাবেন, তাঁদের রস্টার ও রুটম্যাপ জেলা-নেতৃত্ব এবং অঞ্চল-বুথের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছে এই টিম।’
নেতাদের রাত্রিবাসের বাড়ি চিহ্নিত করার পাশাপাশি অনেক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে ছোট-বড় নিরাপত্তারক্ষীদের টিমও আছে। কোনও নেতা বা মন্ত্রী যে বাড়িতে রাতে থাকবেন, সেখানে বা আশপাশে নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজরুল মঞ্চে দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচির উদ্বোধন করার আগেই অভিষেকের তত্ত্বাবধানে থাকা এই বিশেষ টিম নেতাদের রস্টার ও রুটম্যাপ তৈরির কাজ অনেকাংশে সেরে রেখেছিল। তা অনুযায়ী তৃণমূলের অতিথি নেতা কোনও গ্রাম-সফর শেষ করে জনতার অভাব-অভিযোগ শুনে এবং সরকারি প্রকল্প নিয়ে প্রচার সেরে যে রিপোর্ট তৈরি করবেন, তা নিয়েই পরের দিন ‘দিদি-র দূত’ টিম পৌঁছবে সংশ্লিষ্ট গ্রামে।