Death Certificate : মৃত্যুর এক ঘণ্টায় ডেথ সার্টিফিকেট – west bengal health department ordered death certificate should be handed over to the family within one hour of the death


তাপস প্রামাণিক
মৃতজনে প্রাণদান অসম্ভব হলেও মৃতের অঙ্গে সঙ্কটাপন্নের প্রাণরক্ষা আজ বাস্তব। অন্ধজনও সেই সূত্রেই ফিরে পেতে পারেন চোখের আলো। অন্ধজনের এই আলো ফিরে পাওয়ার পথ সুগম করতে কারও মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যে মৃতের পরিবারের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট তুলে দিতে জারি হলো সরকারি নয়া আদেশনামা। বাড়ি কিংবা হাসপাতাল, যেখানেই মৃত্যু হোক না কেন, এই নিয়ম মানতে হবে ডেথ সার্টিফিকেট (Death Certificate) প্রদানকারী চিকিৎসকদের। উদ্দেশ্য, মৃত্যুর পর অতি দ্রুততার সঙ্গে যাতে মৃতের চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়। লক্ষ্য, সেই কর্নিয়া যথযথ সংরক্ষণ করে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে অন্ধজনের দৃষ্টি ফেরানো। সরকারি এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা (Doctors)। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা, এতে অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচি গতি পাবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এক জন মৃত মানুষের চোখের কর্নিয়া ব্যবহার করে দু’জনের কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব ঘোচানো সম্ভব। তার জন্যে অনেকে মৃত্যুর আগে চক্ষুদানের অঙ্গীকারও করে যান। ভারতের মতো দেশে মৃত্যুর ছ’ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। তা না হলে সেটা কোনও কাজে লাগে না। কিন্তু বর্তমানে চার ঘণ্টা না হলে চিকিৎসকদের থেকে ডেথ সার্টিফিকেট মেলে না। এর নেপথ্যে কোনও বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি না থাকলেও এটাই দস্তুর। ডেথ সার্টিফিকেট পেতে দেরি হওয়ায় অনেক সময়েই কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যায়। ফলে যিনি চক্ষুদানের অঙ্গীকার করে গিয়েছেন, এক দিকে যেমন তাঁর সাধ অপূর্ণ থেকে যায়, তেমনই দৃষ্টিহীন মানুষও চোখের আলো ফেরার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হন। অন্য অঙ্গদানেও একই সমস্যা হয়।

Jalpaiguri News : অ্যাম্বুল্যান্স চালকের দাবি ৩ হাজার, টাকা না থাকায় জলপাইগুড়িতে মায়ের দেহ কাঁধে রওনা ছেলের
এই প্রবণতা রুখতে মৃত্যুর (ক্লিনিক্যাল ডেথ) এক ঘণ্টার মধ্যে আত্মীয়দের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। রাজ্যের সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলাশাসক এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির অধ্যক্ষ-অধিকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই মর্মে। বিশেষ করে যাঁরা অঙ্গদানের জন্য অঙ্গীকার করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা আবশ্যিক করা হয়েছে। এমনকী যাঁরা অঙ্গদানের অঙ্গীকার করে যাননি, তাঁদের পরিবারের লোককেও এ নিয়ে বোঝাতে বলা হয়েছে চিকিৎসকদের। যাতে পরিবারের সম্মতিতে মরণোত্তর চক্ষুদান বা অন্য অঙ্গদান সম্ভব হয়। প্রবীণ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্ত জানান, মারা যাওয়ার পর চোখের কর্নিয়াটা আলাদা ভাবে তুলে সেটাকে অন্যের চোখে প্রতিস্থাপন করা যায়। তাতে যাঁর কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে তিনি আবার দৃষ্টি ফিরে পান। কর্নিয়া সংগ্রহের পর সঙ্গে সঙ্গে যদি সেই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা নাও যায়, তা হলেও সেটিকে সংরক্ষণ করা যায় অন্তত দিন তিনেক। কিন্তু মৃত্যুর পর কর্নিয়া সংগ্রহ করতেই যদি বেশি সময় নষ্ট হয়ে যায়, তখন নষ্ট হয়ে যায় কর্নিয়া। তখন আর সেই কর্নিয়া প্রতিস্থাপনযোগ্য থাকে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা তুলে নেওয়া দরকার চোখ থেকে। হিমাদ্রির আক্ষেপ, ‘উন্নত বিশ্বে বহু মানুষ চক্ষুদান করে থাকেন। ছোট্ট দেশ শ্রীলঙ্কাতেও চক্ষুদানের হার ভারতের থেকে বেশি। তার কারণ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই কাজে উৎসাহ দেন। কিন্তু এখানে মানুষ ততটা সচেতন নন। ডাক্তারবাবুদের মধ্যেও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।’

Measles Vaccine : প্রস্তুতি চূড়ান্ত, হাম-রোধে টিকা অভিযান শুরু সোমে
শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষু ব্যাঙ্কের যুগ্ম সম্পাদক কামাক্ষ্যা মজুমদার জানান, সারা রাজ্যে বছরে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কর্নিয়া সংগ্রহ হয় মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর ছ’ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া তুলতে হয়। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা চার ঘণ্টার আগে ডেথ সার্টিফিকেট দেন না। তার পর সেটাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে হয়। তাতে অনেকটা সময় চলে যায়। সে জন্যে আমরা নিয়মটা বদল করতে বলেছিলাম বার বার। স্বাস্থ্য দপ্তর সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের কাজে গতি বাড়বে। এতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে পারা যাবে।’ তবে চক্ষুদানের বিষয়ে রোগীর পরিবারকে বোঝানোর যে নিদান দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধীন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজির এক চিকিৎসকের কথায়, ‘প্রিয়জনের মৃত্যুর পর যে কোনও মানুষই খুব ভেঙে পড়েন। সেই সময় ডাক্তারদের পক্ষে রোগীর পরিবারকে বোঝানো খুব শক্ত। এই কাজটা মূলত করে থাকেন কাউন্সেলাররা। তাঁরা বাইরের লোক অথবা হাসপাতালের কর্মী হতেই পারেন। সেই কাজ ডাক্তারদের দিয়ে করাতে গেলে গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *