প্রথম টার্গেট ছিলেন নয়ডার একটি হিন্দি খবরের চ্যানেলের মালিক। তালিকার দ্বিতীয় নাম, গাজিয়াবাদের একটি আশ্রমের অন্যতম কর্ণধার। প্ল্যান ছিল তাঁদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর।
দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে কার্যত ধাওয়া করে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) এসটিএফের (STF) হাতে ধৃত আইএস (IS) সন্দেহভাজন মহম্মদ সাদ্দাম এমনই একটি নাশকতামূলক পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এই চক্রান্তের অন্যতম মাথা মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত প্রাক্তন সিমি সদস্য আব্দুল রাকিব কুরেশিও, যাঁর সঙ্গে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের যোগ পেয়েছে এসটিএফ। কুরেশিও এখন কলকাতা এসটিএফের (Kolkat STF) হেফাজতে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জঙ্গি সংগঠনের টার্গেটে থাকা ওই দু’জনকে এই বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। নজর রাখা হচ্ছিল, আইএস (IS) জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপের উপরেও। তবে সূত্র মারফত খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) দ্রুততার সঙ্গে সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করায় আপাতত সেই ছক বানচাল করা গিয়েছে।
কেন এমন পরিকল্পনা করা হয়েছিল?
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, নয়ডার ওই টিভি চ্যানেলের কর্ণধার দীর্ঘদিন ধরে নিজে একটি শো পরিচালনা করেন। তাঁর একাধিক অনুষ্ঠানে উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। আদালতে মামলাও দায়ের হয়েছে। সেই সময় থেকে ওই চ্যানেলের মালিক তথা সিইও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নজরে পড়েন। অন্যদিকে, গাজিয়াবাদ এলাকার একটি আশ্রমের কর্ণধারও দীর্ঘদিন ধরে নানা ধর্মীয় বিষয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর নামে মামলা মোকদ্দমা তো রয়েছেই, এমনকী গত ডিসেম্বর মাসে গাজিয়াবাদ পুলিশ অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কায় কয়েকদিনের জন্য তাঁকে নজরবন্দিও করে রেখেছিল। আইএস (IS) তাঁকেও শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বর্তমানে আল কায়দার ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টাল শাখা এবং আইএস দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয়। তার মধ্যে আইএসের জয়পুর মডিউল তাদের শাখা প্রশাখা ছড়াচ্ছে। কলকাতা এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত অভিযুক্তরা সেই মডিউলের অধীনেই কাজ করছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ফলে তাঁরাই নয়ডা এবং গাজিয়াবাদের দু’জনকে ‘সবক’ শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক হয়েছিল, কী ভাবে ওই অপারেশন করা যায়, তার রূপরেখা তৈরি করতে কলকাতার কোনও একটি জায়গায় গোপন বৈঠকে বসা হবে। সেখানে একাধিক ‘বড় মাথা’-র উপস্থিতিতে পুরো পরিকল্পনা ছকে তারপর তা কার্যকর করা হবে।
মিটিং কেন কলকাতায় করার প্ল্যান ছিল?
গোয়েন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে কলকাতাকে সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এই শহর এবং শহরতলিকে বেছে নেয় তারা। এর আগেও আল কায়দা এবং আইএস-যোগের সন্দেহে অনেকে ধরা পড়েছে এখান থেকে। কিন্তু এরপরেও কলকাতাকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ, এখানে সহজে মানুষের ভিড়ে মিশে থাকার সুবিধা নেওয়া সম্ভব। তদন্তে উঠে এসেছে, মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত কুরেশির নির্দেশে সাদ্দাম বাংলার বিভিন্ন জেলায় পড়ুয়াদের মধ্যে আইএসের আদর্শ প্রচার করার চেষ্টা করছিলেন। বীরভূম এবং দুই বর্ধমানের কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে ডার্কওয়েবের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সংগঠনের মুখপত্রের লিঙ্কও পাঠিয়েছিলেন তিনি। কেন ওই পড়ুয়াদের কাছে সেগুলো পাঠানো হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন এসটিএফের (STF) গোয়েন্দারা। আর তাহলেই পুরো চক্রান্তের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বীরভূমের একটি পরিবারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে আইএস (IS) জঙ্গি মুসাকে এ রাজ্যে পাঠানো হলেও সিআইডি (CID) তাঁকে গ্রেপ্তার করে নেওয়ায় জঙ্গি সংগঠনের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল।
ষড়যন্ত্রী কারা:
ধৃত আইএস সন্দেহভাজন মহম্মদ সাদ্দাম, ধৃত প্রাক্তন সিমি সদস্য আব্দুল রাকিব কুরেশি
কাদের হয়ে কাজ:
জঙ্গি সংগঠন আইএসের জয়পুর মডিউলের অধীনে কাজ করছিলেন দু’জন
কোথায় পরিকল্পনা:
ছক ছিল, কলকাতার কোনও গোপন ডেরায় আরও কিছু ‘বড় মাথা’র উপস্থিতিতে প্ল্যান চূড়ান্ত হবে