Mamata Banerjee : প্রাপ্তিযোগ? ফেরত দিন, ক্ষমা চান: দিদি – mamata banerjee at administrative meeting in murshidabad sagardighi


এই সময়: কারও কাছ থেকে কোনও ‘প্রাপ্তি’-যোগ হলে তা ফেরত দিতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ব্যক্তির কাছ থেকে এই ‘প্রাপ্তি’ হয়েছিল, তাঁর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলে মানুষ ক্ষমা করে দেবেন বলেও মনে করেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্য জুড়ে ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ কর্মসূচিতে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন সাংসদ-বিধায়ক-নেতা-নেত্রী মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে সোমবার প্রশাসনিক সভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “যদি কেউ কারও কাছ থেকে প্রাপ্তি নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর কাছে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিন। তাতে মানুষের ভালো হবে। মানুষ ভুল বুঝবে না। বারবার ক্ষমা চাইলে মানুষ ক্ষমা করে দেবে।”

Mamata Banerjee : ‘…আমি কী চিজ জানেন তো!’ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়ে তোপ মমতার
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে তা মানুষ অবশ্যই বলবেন- সে কথা এ দিন খোলাখুলি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি ‘অপপ্রচারে’-তে কান না-দেওয়ার কথাও বলেছেন। দিদির সুরক্ষাকবচ’ কর্মসূচি নিয়ে মমতার বক্তব্য, “আমাদের লোকেরা যাবে দিদির সুরক্ষাকবচ নিয়ে। এটা আমারই কর্মসূচি। আপনার যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই বলবেন। মানুষের সমস্যা থাকে। একটা সমস্যার সমাধান হলে আবার একটি সমস্যা এসে জড়ো হয়। আপনারা বলবেন, কিন্তু অপপ্রচারে কান দেবেন না।”

দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে ‘দিদির দূত’ হিসেবে গ্রামে গিয়ে কোথাও রাস্তা, কোথাও পানীয় জল, কোথাও জব কার্ড, কোথাও বাড়ি না-পাওয়ার অভিযোগ শুনতে হয়েছে তৃণমূলের নেতা-নেত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের। ওই তালিকায় নতুন সংযোজন বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। বিজেপির প্রতীকে জয়ী হয়ে দলবদল করে তৃণমূলে যাওয়ার কারণে জনতার প্রশ্নের মুখে পড়লেন তিনি। সোমবার বাগদার একটি গ্রামে ঢুকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে রামপদ মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী বিশ্বজিতকে সটান বলেন, “আপনাকে বলব কখন? আপনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলেন। তার পর ফের তৃণমূলে গেলেন?”

Mamata Banerjee : ‘বেআইনিভাবে বঙ্গভবনের সিসি ক্যামেরা খুলেছে গুজরাট পুলিশ’, সাকেতের পাশে দাঁড়ালেন মমতা
বিধানসভায় কাগজে-কলমে বিশ্বজিৎ এখনও বিজেপির বিধায়ক। গ্রামের মানুষের এই প্রশ্নের মুখে পড়ে বিশ্বজিৎ যুক্তি দেন, “আমি বিধায়ক হিসেবে এসেছি, বিধায়ক কোনও দলের হয় না, আপনার কোনও সমস্যা থাকলে বলুন।’ তখন রামপদ বলেন, ‘আগে অনেক বার রাস্তা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বলেছি।” দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে বীরভূমের নানুরের বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাজি নিজের বিধানসভা এলাকার সিংহি গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা অজয় নদের বেহাল বাঁধ নিয়ে অভিযোগ করেন। বিধায়কের সেই বাঁধ পরিদর্শনের ভিডিয়ো ক্লিপে দেখা গিয়েছে, বিধানকে স্থানীয় এক তৃণমূলকর্মী বলছেন, ‘বাঁধ না-থাকলেও হবে, বালি থাকতে হবে, তা হলে পার্টি চলবে!’ যদিও ‘এই সময়’ এই ভিডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি। বিধান পরে বলেন, “বাঁধ দেখতে গিয়েছিলাম, আমি কারও মুখে হাত দিতে পারি না। গণতান্ত্রিক দেশ, যে যা খুশি বলতে পারে।”

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গাজিপুরে দিদির দূত হয়ে গিয়েছিলেন আইএনটিটিইউসি নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত সদস্যদের কয়েক জন তাঁকে বলেন, “পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসন উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কাজ করলেও জেলা পরিষদ থেকে সে ভাবে এলাকায় উন্নয়নের জন্য কোনও তৎপরতা দেখানো হয়নি।” কাটোয়া-২ নম্বর ব্লকের দেয়াসিন গ্রামের সুফল বাগ, রবি ধাড়া, নমিতা ধাড়ারা সরকারি আবাস যোজনা নিয়ে ঋতব্রতর সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন করেও টাকা না-পাওয়ার অভিযোগ জানান। ঋতব্রত তাঁদের নাম লিখে নেন। গ্রামবাসীদের এই বক্তব্য যথাযথ জায়গায় জানাবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

আবার, ‘দিদির সুরক্ষাকবচ‘ কর্মসূচিতে সামিল না-হওয়ায় হাওড়ার নিশ্চিন্দা থানার বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দাদের মারধরের অভিযোগ উঠল। রবিবার বালি-জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত ওই এলাকায় দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ। স্থানীয় নিশ্চিন্দা কালীতলায় একটি জনসভার কর্মসূচিও ছিল কল্যাণের। সেই কর্মসূচিতে বিদ্যাসাগর কলোনির বাড়ি বাড়ি সকলকে যেতে বলা হয়। ওই কলোনির বাসিন্দা বাম সমর্থক সঞ্জয় দাস সেই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। অভিযোগ, রবিবার রাত ১১টার পর ওই কলোনির ৬-৭ জন তৃণমূলকর্মী সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করে সাড়া না-পেয়ে তাঁর বাড়ির টিনের দরজা ভেঙে ঢুকে সঞ্জয়কে টেনে বার করে বেধড়ক মারধর করেন। যদিও কল্যাণ বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। এখন কেউ আর সিপিএম করে না। ওরা পঞ্চায়েত ভোটের আগে হালে পানি পাওয়ার চেষ্টা করছে।”

Didir Suraksha Kawach : ঠাসা কর্মসূচিতে ফাঁকির জো নেই
দিদির সুরক্ষাকবচ চলাকালীন গত শনিবার, ১৪ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের সাইবনায় চড় মারার ঘটনায় এ বার নতুন মাত্রা যোগ হলো। সাইবনার নন্দদুলাল মন্দির কমিটির এক সদস্য দত্তপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সাগর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। সাগরকেই ওই দিন এক ‘তৃণমূলকর্মী’ চড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে।

আমাদের লোকেরা যাবে দিদির সুরক্ষাকবচ নিয়ে। এটা আমারই কর্মসূচি। আপনার যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই বলবেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *