দীর্ঘ আত্মগোপনের প্রথম পর্বে বাংলাদেশে যান জীবন। শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) প্রতিবেশী দেশের ক্ষমতায় আসার পরে সেখান থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয় কেএলও। এরপর মায়ানমারের গোপন ডেরায় আশ্রয় নেন সংগঠনের প্রধান। এতদিন সেখানেই ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের কাছেও খবর ছিল।
মূলত ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে উত্থান হয় এই জঙ্গি সংগঠনের। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যুবকদের একত্রিত করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান জীবন। এরপর টানা তিনবছর ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক নাশকতা চালায় কেএলও। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিল ২০০২ সালে ধূপগুড়িতে সিপিএমের পার্টি অফিসে ঢুকে একে-৪৭ চালিয়ে পাঁচজন নেতাকে খুন। পরের বছর কোচবিহারের মাথাভাঙায় একটি ভিডিয়ো হলে ঢুকে ফের চারজনকে খুন করার পরে টনক নড়ে সরকারের। শুরু হয় ‘অপারেশন ফ্ল্যাশআউট।’
জীবনের আদি বাড়ি আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের উত্তর হলদিবাড়িতে। দীর্ঘদিন খোঁজ না থাকলেও ২০১৯ সালে গোপন ডেরা থেকে সাংবাদিকদের ভিডিয়ো বিবৃতি পাঠাতে শুরু করেন তিনি। সপ্তাহখানেক আগে শেষ ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে শান্তি আলোচনায় বসবে কেএলও। সেখানে মধ্যস্থতাকারীর ভুমিকায় থাকবেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
এরপরেই মঙ্গলবার মায়ানমার ছেড়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলা দিয়ে ভারতে ঢোকেন জীবন। জল্পনা শুরু হয়, তবে জীবন সিংহ কি অসম রাইফেলসের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন? না কি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? কোনও তরফ থেকে সরকারি বিবৃতি না আসায় বিষয়টি নিয়ে চরম ধোঁয়াশা দেখা দেয়। তবে জীবন দাবি করেন, ভারত সরকারের তরফে শান্তি আলোচনার বার্তা পেয়েই তিনি দেশের মাটিতে পা রেখেছেন। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসম রাইফেলসের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “স্পর্শকাতর ওই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মুখ না খুলতে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে।”
অসমর্থিত সূত্রের খবর, আপাতত সপারিষদ জীবন অসম রাইফেলসের ডেরাতেই থাকবেন। বুধবার দিল্লি গিয়ে তিনি প্রথমে বোন সুমিত্রার কাছে থাকা দুই কন্যার সঙ্গে দেখা করবেন। কারণ, স্ত্রী ভারতীর মৃত্যুর পর থেকে জীবনের দুই কন্যা সুমিত্রার ওখানে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘গোটা পর্বের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।’ কারণ, কেএলওর তরফে রাজ্যকে ভাগ করে উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের যে বার্তা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংবিধানগত ভাবে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে হলে রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে করা কোনওমতেই সম্ভব নয়। ফলে দীর্ঘ কুড়ি বছর পর জীবনের এই প্রত্যাবর্তনের পিছনে যে জোরালো কোনও কারণ রয়েছে তা নিয়ে নিশ্চিত সবপক্ষই।