Kolkata First Cinema Hall : দেশের প্রথম সিনেমা হল ছিল কলকাতাতেই, সময়ের ভারে মুছেছে ইতিহাস – first cinema hall in kolkata named chaplin was built by jamshedji framji madan was also indias first movie hall


গৌতম বসুমল্লিক

সাহেবদের উদ্যোগে কলকাতার শহরে প্রথম বায়োস্কোপ (Bioscope) দেখানো আরম্ভ হয়েছিল চৌরঙ্গি থিয়েটারে (Chowringhee Theatre) ১৮৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। এখনকার চৌরঙ্গি রোড ও শেক্সপিয়ার সরণির সংযোগে অবস্থিত তখনকার সেই চৌরঙ্গি থিয়েটার আদতে ছিল থিয়েটার হল। তারপর থেকে মিনার্ভা, স্টার সহ আরও যে সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে বায়োস্কোপ দেখানো হত, সেগুলো সবই নাট্যমঞ্চ। শুধু বায়োস্কোপ বা চলচ্চিত্রের জন্য আলাদা মঞ্চ নির্মাণ হতে সময় লেগেছিল আরও বেশ কয়েকটা বছর।

Kolkata Regal Cinema Hall : বন্ধ হচ্ছে ধর্মতলার আইকনিক রিগাল সিনেমা হল? মুখ খুললেন মালিক
ম্যাডান বায়োস্কোপ

এক দিকে যখন বিদেশি কোম্পানিগুলো বায়োস্কোপ দেখাচ্ছে, হীরালাল সেনের ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ (Royal Bioscope) কোম্পানি’ও তখন থিয়েটারের চলমান চিত্র তৈরি করছে এবং দেখাচ্ছে। বায়োস্কোপে দর্শকের আগ্রহ দেখে আরও কয়েকটা বায়োস্কোপ কোম্পানি গজিয়ে উঠলেও সেগুলো বেশিদিন চলেনি। তারই মধ্যে চলচ্চিত্রকে সেই অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছিলেন ‘ম্যাডান বায়োস্কোপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা জামসেদজি ফ্রামজি ম্যাডান নামের এক পার্সি ব্যবসায়ী। ১৯০২ সাল থেকে তিনি ছবি দেখাতে আরম্ভ করেন। এখন যেখানে মনোহরদাস তড়াগ, তার উত্তরে ময়দানের মাঠের উপরে তাঁবু খাটিয়ে দেখানো হত বায়োস্কোপ। আবার উত্তর কলকতার হাতিবাগান এলাকায় বর্তমান টাউন স্কুলের কাছেও তারা তাঁবু খাটিয়ে বায়োস্কোপ দেখাতে আরম্ভ করে।

Projapoti Nandan Controversy : ‘ভয় দেখানো হয়… দেবের জেদেই হিট প্রজাপতি’, সাকসেস পার্টিতে অকপট মিঠুন
চ্যাপলিন- প্রথম সিনেমা হল (First Cinema Hall)

জামসেদজি ফ্রামজি ম্যাডানই প্রথম বায়োস্কোপ দেখানোর জন্য ১৯০৭ সালেই ‘ম্যাডান বায়োস্কোপ’ নামে একেবারে আলাদা একটা প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করালেন। পরে নাম বদল করে সেটা হয় ‘এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেস’। আরও পরে তার নাম হয় ‘মিনার্ভা’ (Minarva Theatre) এবং শেষে কলকাতার পুরসভা হলটা অধিগ্রহণ করে নাম দেয় ‘চ্যাপলিন’ (Chaplin)। যতদুর জানা যায়, এটাই ছিল ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ। কলকাতার পুরসভার (KMC) প্রাধান কার্যালয়ের ঠিক দক্ষিণ দিকে ছিল হলটা। শহর কলকাতার তথা ভারতের সেই প্রথম সিনেমা হল আজ আর নেই। বেশ কিছুকাল আগে সেটা ভেঙে পাশের উদ্যানের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গিয়েছে দেশের প্রথম সিনেমা হলের স্মৃতিটুকুও।

Mrinal Sen Chanchal Chowdhury : ‘অদ্ভুত লাগছে…’, বাবার লুকে চঞ্চলকে দেখে কী প্রতিক্রিয়া মৃণাল পুত্রের?
বাংলার প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র

ম্যাডান কোম্পানি গোড়ার দিকে অন্যদের মতো নির্বাক বায়োস্কোপই দেখাত, তারপর তারা চলচ্চিত্র তৈরিতেও এগিয়ে আসে। ওই একই সময়ে, অর্থাৎ, ১৯০৭ সালে, উত্তর কলকতার হাতিবাগান এলাকার যেখানে ম্যাডান কোম্পানি তাঁবু ফেলে বায়োস্কোপ দেখাত, সেখানে তারা ‘কর্নওয়ালিশ থিয়েটার’ একটা নাট্যগৃহ তৈরি করে থিয়েটারের জন্য ভাড়া দিতে আরম্ভ করে আর ওই মঞ্চেই ‘ক্রাউন সিনেমা’ নাম দিয়ে সিনেমার প্রদর্শনও চলতে থাকে পাশাপাশি। ১৯২১ সালে সেখানেই মুক্তি পায় বাংলার প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’। শিশিরকুমার ভাদুড়ী ওই বছরেই থিয়েটারের পাশাপাশি ম্যাডানদের সিনেমা কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ‘মোহিনী’ ও ‘কমলে কামিনী’ নামে দুটো ছবি পরিচালনা করেন, সেখানে তিনি নিজে অভিনয়ও করেছেন। পরে অবশ্য তিনি আর কোনও ছবি পরিচালনা করেননি। ‘কর্নওয়ালিশ থিয়েটার’ পরবর্তীকালে ‘শ্রী সিনেমা’ হল নামে পরিচিত হয়।

Purna Cinema Hall

Purna Cinema Hall : ‘রসা থিয়েটার’ বর্তমানে ‘পূর্ণ সিনেমা’ নামে পরিচিত। ছবি সৌজন্যে- সুজয় ঘোষ


পূর্ণ সিনেমা

শিশিরকুমার ভাদুড়ী ‘কর্নওয়ালিশ থিয়েটার’ ভাড়া নিয়ে ‘নাট্যমন্দির’ নামে থিয়েটার কোম্পানি খুলে নাট্যাভিনয় আরম্ভ করলে ম্যাডান কোম্পানি ওই প্রেক্ষাগৃহের পাশে ‘ক্রাউন’ নামে আরেকটি মঞ্চ তৈরি করে চলচ্চিত্র দেখাতে আরম্ভ করে। পরবর্তীকালে সেটা ‘উত্তরা সিনেমা’ হল নামে পরিচিত হয়। অবশ্য সামান্য কিছুদিন আগে, ১৯২০ সাল নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় এখনকার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে নির্মিত হয় ‘রসা থিয়েটার’। সেখানেই ‘ইন্দো-ব্রিটিশ কোম্পানি’র প্রযোজনায় ১৯২১ সালে মুক্তি পায় ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় বা ডিজির পরিচালিত নির্বাক ছবি ‘বিলেত ফেরৎ’। ‘রসা থিয়েটার’ বর্তমানে ‘পূর্ণ সিনেমা’ নামে পরিচিত। প্রায় ওই একই সময়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শান্তি থিয়েটার’, যা বর্তমানে ‘ভারতী সিনেমা’ নামে পরিচিত।

তথ্যসূত্র:

শংকর ভট্টাচার্য, বাংলা রঙ্গালয়ের ইতিহাসের উপাদান (দ্বিতীয় খণ্ড)
শংকর ভট্টাচার্য, বাংলা রঙ্গালয়ের ইতিহাসের উপাদান (তৃতীয় খণ্ড)
রথীন চক্রবর্তী, কলকাতার নাট্যচর্চা
চণ্ডী মুখোপাধ্যায়, বাংলা সিনেমার ইতিকথা: দুই বাংলার চলচ্চিত্র (১৯০৩—২০১৪)
সুজয় ঘোষ, কলকাতার সিনেমা হল: পটভূমি ও ইতিবৃত্তান্ত



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *