কলকাতার সিনেমা হল: গোড়ার কথা
ভারতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সূচনা হয়েছিল বোম্বাই, অধুনা মুম্বইতে (Mumbai)। লন্ডনের মেসার্স লুমিয়ের ব্রাদার্স (Lumiere Brothers) ১৮৯৬-এর জুলাই মাস থেকে ‘সিনেমাস্কোপ’ (Cinemascope) নামে এক ধরনের নির্বাক চলচ্চিত্র দেখানো আরম্ভ করে। ওই বছরেই অক্টোবর মাসে কলকাতায় (Kolkata) এল সিনেমাস্কাপের মতো আর এক ধরনের চলচ্চিত্র ‘বায়োস্কাপ’ (Bioscope)। কলকাতায় সেই বায়োস্কোপ দেখানো আরম্ভ করেন হাডসন নামে এক ইউরোপীয়। কোম্পানির নাম ছিল ‘হাডসন সারপ্রাইজ পার্টি’। ১৮৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি, এখনকার চৌরঙ্গি রোড ও শেক্সপিয়ার সরণির সংযোগে অবস্থিত তখনকার বিখ্যাত চৌরঙ্গি থিয়েটারে প্রথম বায়োস্কোপ দেখানো আরম্ভ করে তারা। ওই কোম্পানি গ্র্যান্ড হোটেলের ‘থিয়েটার রয়্যাল’ এবং বিভিন্ন ইউরোপিয় ক্লাব-বাড়িতে বায়েস্কাপ দেখাত।
মিনার্ভা থিয়েটার (Minerva Theatre)
বাংলা পেশাদারি থিয়েটারে সেই সময়টা খুবই প্রতিযোগিতার। এখনকার মত সে যুগেও দর্শক টানবার জন্য থিয়েটার দলগুলি নানা চমক দিত। তেমনই এক চমক দিল অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফির মিনার্ভা থিয়েটার। চৌরঙ্গি থিয়েটারে প্রথম বায়োস্কোপ দেখানোর পক্ষকালের মধ্যেই, ১৮৯৭-এর ৩১ জানুয়ারি মিনার্ভা থিয়েটারে নির্ধারিত অভিনয়ের পরিবর্তে দেখান হল মিস্টার সুলিভানের Nimatograph। বাংলা থিয়েটারে সেই প্রথম বায়োস্কোপের প্রদর্শন। মিনার্ভার দেখা দেখি অমরেন্দ্রনাথ দত্তের ক্লাসিক থিয়েটারও বায়োস্কোপ দেখানো আরম্ভ করল ১৮৯৮-এর ১৯ মার্চ থেকে।
স্টার থিয়েটার (Star Theatre)
এই সময়ে আরও এক ব্রিটিশ সিনেমাওয়ালা জে জে স্টিভেনসন কলকাতায় সিনেমা (Kolkata Cinema Halls) দেখাতে আসেন। তিনি প্রথমে হাইকোর্টের কাছে ফাঁকা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে বায়েস্কোপ দেখাতেন। তারপর স্টারের অন্যতম স্বত্বাধিকারী অমৃতলাল বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮৯৮-এর ২৯ অক্টোবর থেকে স্টারে চলচ্চিত্র প্রদর্শন আরম্ভ করলেন। ওই দিন, ‘বাবু’ নাটকের অভিনয়ের পর ‘বায়োস্কোপ’ ও মিস্ নেলি মাউন্টকাসলের ‘সর্পিল’ ও ‘রামধনু’ নৃত্য প্রদর্শিত হয়। বায়োস্কোপে ‘নেলসনের মৃত্যু’, রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে তোলা ‘হীরক জুবিলি শোভাযাত্রা’ ও ‘গ্ল্যাডস্টোনের শবানুগমন’-এর চলমান ছবি দেখানো হয়। সমস্ত ছবিই নির্বাক, কারণ তখনও কথা বলা চলচ্চিত্র বা ‘টকি’ আবিষ্কৃত হয়নি। পরের দিনেও নাটক অভিনয়ের পর বায়োস্কোপ দেখানো হয়। এরপর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের প্রত্যেকটি অভিনয়-রজনীতেই থিয়েটারের পর বায়োস্কোপ এবং কোনও কোনও দিন তার সঙ্গে নৃত্যানুষ্ঠানও হয়েছে।
পরের বছর, অর্থাৎ, ১৮৯৯ সালের একেবারে গোড়া থেকে ১১ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেক অভিনয় রজনীতে চলচ্চিত্র ও নৃত্য প্রদর্শিত হয়েছে। এরপর স্টারের নাট্যদল অভিনয়-সফরে অন্যত্র যায়। ফিরে এসে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার আরম্ভ হয় নিয়মিত অভিনয় এবং তৎসহ বায়োস্কোপ প্রদর্শনও। ২৯ এপ্রিল ‘ইন্ডিয়ান ডেলি নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে লেখা হল
‘RE-OPENING NIGHT!/ STAR THEATRE/ SATURDEY, 29 TH APRIL, AT 9 P. M./ OPERA —BENAZIR BADRAMUNIR/ SWEET SONGS! CHARMING NAUCHES!/ Followed by the Million’s Favourite Feast,/THE BIOSCOPE,/ EXHIBITION OF NEW PICTURES!/ THEN THE WONDER OF WONDERS!/ MAGICAL SERPENTINE DANCE!/ Next day, Sunday, at Candle-light/ GRAMYA-BIVRAT,/ BIOSCOPE AND DANCE/ At the Conclusion of his present engagements, the/ owner is open to dispose of the Bioscope, Pictures/ and complete Plant for working./ AMRITLAL BOSE, Manager.’
স্টারে বায়োস্কোপ দেখানোর ক্ষেত্রে স্টিভেনসন ছাড়াও ‘এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ’, ‘গ্লোব ট্রটার কোম্পানি’, ‘নিউ ইলেকট্রিক থিয়েটার’, ‘এ্যাম্পায়ার বায়োস্কোপ’, ‘লিউপিন বায়োস্কোপ’, ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ’, ‘অরোরা বায়োস্কোপ’ প্রভৃতি সিনেমাওয়ালার নাম পাওয়া যায়। প্রথম দিকে দেখানো ছবিগুলি সরাসরি ইউরোপ থেকে আসত। পরে দিল্লিতে সম্রাট পঞ্চম জর্জের দরবার বা কলকাতা সফরের মত দেশীয় ঘটনাও বায়োস্কোপে দেখানো হত। আরও পরে, শুধু তথ্যচিত্র নয়, দান্তের
(Inferno) কিংবা ওয়াল্টার স্কটের
-এর মত কাহিনিচিত্রের প্রদর্শনও হয়েছে।