ঠিক কত টাকা, কে নিয়েছেন, কার কাছ থেকে নিয়েছেন – সেই রহস্যের জট কাটাতে এ বার কুন্তলের সঙ্গে তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার ভাবনা ED-র আধিকারিকদের। আজ, মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির সংগঠন অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা তাপসকে।
প্রাথমিকে শিক্ষক পদের জন্য যে ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর থেকে কুন্তলের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তাপস, তাঁদের তালিকা তিনি ED-র অফিসারদের দিয়েছেন। আবার কুন্তলের দাবি, মানিক ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস টাকা চেয়ে তাঁকে যে হুমকি দিয়েছেন, সেই কথোপকথনের রেকর্ডিং তিনি তদন্তকারীদের দিয়েছেন। কার দাবি ঠিক, সে খোঁজ চালাচ্ছে ED। কুন্তলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে লেখা বেশ কিছু সাংকেতিক নাম এবং টাকার হিসেব ED-র নজরে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, ডায়েরিতে কয়েক জনের নাম হিসেবে দু’টি অক্ষর লেখা রয়েছে, কারও আবার শুধু পদবিটুকু লেখা আছে। কুন্তলের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটেও নজর রয়েছে তাঁদের। বেশ কিছু চ্যাট মুছে ফেলা হয়েছে বলেও সন্দেহ ED-র। সেই চ্যাট হিস্ট্রি উদ্ধারে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
এরই মধ্যে সোমবার সকালে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাপসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন কুন্তল। তিনি বলেন, “আগেও বলেছি, এখনও বলছি, এ সবই তাপস মণ্ডলের চক্রান্ত। তাপস এবং গোপাল দলপতি চক্রান্ত করে এই কাজ করেছেন। তাপস মণ্ডল ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন সিবিআইয়ের নাম করে। তার কল রেকর্ড CBI-কে দিয়েছি। নীলাদ্রি ঘোষও রয়েছেন। উনি তাপসের দালাল।” ED সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় এজেন্সির নাম করে নীলাদ্রিকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের কাছেও একটি কল রেকর্ড জমা পড়েছে। সেই কণ্ঠস্বর তাপসের কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে খতিয়ে। ED সূত্রে খবর, জেরার সময়ে তাপস, গোপাল দলপতি এবং নীলাদ্রির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন কুন্তল। আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের বাসিন্দা গোপাল বেআইনি লগ্নিসংস্থার একটি মামলায় বর্তমানে তিহার জেলে বন্দি বলে ED খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছে।
কিন্তু কে এই নীলাদ্রি ঘোষ? তাপসের পরিচিত নীলাদ্রির বাড়ি হুগলির ধনেখালিতে। কর্মসূত্রে অবশ্য তিনি গড়িয়া এলাকায় থাকেন। এ দিন তিনি দাবি করেছেন, “কুন্তলের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। কুন্তলকে জিজ্ঞাসা করুন, ও আমাকে কতদিন চেনে।” তাঁর সংযোজন, “আমি তাপস মণ্ডলকে চিনি। ওঁর কয়েকজন পরিচিতর কাছ থেকে কুন্তল টাকা নিয়েছেন বলে উনি জানিয়েছিলেন। আমিই কুন্তলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওর কাছ থেকে ছ’লক্ষ টাকা নিয়ে ফেরতও দিয়েছি।” তাঁর দাবি, যে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কুন্তল টাকা নিয়েছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের টাকাই তিনি ফেরত দিয়েছেন। ওই চাকরিপ্রার্থীরাও ED-কে জানিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পেয়েছেন।
গত সপ্তাহে প্রায় ২৩ ঘণ্টা ধরে কুন্তলের বাড়িতে তল্লাশি ও জেরার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে ED। তিনদিন হলো হুগলি (Hooghly) জেলার তৃণমূলের এই যুবনেতা ED হেফাজতে রয়েছেন। বগটুই কাণ্ডে CBI হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যুর পর, কুন্তলকে জেরার সময়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সর্বক্ষণ CCTV ক্যামেরার নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাঁকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।