ধর্মতলায় নেতাজি মূর্তির সামনে এ দিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সারা দেশ আজকের দিনে বড় অসহায়। বাংলা কোনওরকমে সামলাচ্ছে। ৩৬৫ দিনই আমরা কিছু না কিছু ফেস করি। নবচেতনার উন্মেষ, বিপ্লবের প্রেরণা থেকে আমরা উঠে এসেছি বলেই লড়তে পারি। অনেকে এজেন্সির ভয়ে পালিয়ে যায়। আমরা পালাই না। আমরা বলি, আরও করো। যত এজেন্সি পারো লাগাও। যা আছে সব নিয়ে নাও। কিন্তু দেশটাকে বেচে দিও না, রক্ষা করো!”
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (Pradhan Mantri Awas Yojana) প্রকল্পের কাজ দেখতে কেন্দ্রীয় টিম সম্প্রতি রাজ্যে ঘুরে গিয়েছে। গ্রামীণ প্রকল্পগুলির কাজ দেখতে আরও কয়েকটি ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং (NLM) টিম আসছে রাজ্যে। এ দিন সরাসরি সে প্রসঙ্গ না-তুলেই মমতা বলেন, “কথায় কথায় বাংলাকে অসম্মান করা হচ্ছে। একটা আরশোলা কামড়ালেও সেন্ট্রাল টিম রাজ্যে চলে আসছে! গত দু’তিন মাসের মধ্যে কতগুলি সেন্ট্রাল টিম এসেছে? পঞ্চাশের বেশি হবে! উত্তরপ্রদেশে ক’টা পাঠিয়েছে?”
দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো, সংবিধান, নেতাজির আদর্শের কথাও এ দিনের অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই উঠে আসে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা। মমতা বলেন, “মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটা সংবিধান রয়েছে। সেই সংবিধান লঙ্ঘন করা মানে নিজের ও মানুষের অধিকার খর্ব করা।” অন্য রাজ্যে কেন কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হচ্ছে না, সে প্রশ্নে উন্নাওয়ের কথা বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “শুনেছি, এই ঘটনায় যিনি জড়িত, তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জানি না, খবরটা কতটা সত্যি। খোঁজ নিচ্ছি।” তাঁর সাফ কথা, “আইন প্রয়োগে বৈষম্য করা যায় না। এখানে কথায় কথায় বাংলাকে অসম্মান করা হচ্ছে। নিজেদের বেলায় সব সাধু! বৃদ্ধকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে। ছাত্রকে নিয়ে গিয়েছে। সেন্ট্রাল টিম গিয়েছে সেখানে?”
কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠানো নিয়ে মমতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য BJP-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) পাল্টা বলেন, “CBI তো আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। অনেক বড় মাথা বেরিয়ে আসবে।” CPIM-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন, তখন প্রতিদিন বাম সরকারকে অপসারণের জন্য ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ, কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো এবং CBI তদন্তের দাবি করতেন। তা হলে এখন উল্টো কথা বলছেন কেন? সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে চললে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই!”
এ দিনের অনুষ্ঠানে নেতাজির জন্ম মুহূর্তে মঞ্চে শঙ্খ বাজিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। দেশাত্মবোধক গানের একটি CD প্রকাশ করা হয়। CD-র আটটি দেশাত্মবোধক গানই মমতার লেখা। সুর দিয়েছেন অজয় চক্রবর্তী। আট স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিয়ে লেখা গানগুলি গেয়েছেন অজয় চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয়, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, ইমন ও অনল চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আলিপুর জেলের প্রদর্শনীতে এই CD বাজানো হবে। অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সুগত বসু, সুমন্ত্র বসু, চন্দ্র বসু-সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।