প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। সেই সমস্যা এবার মেটাতে উদ্যোগী হলো কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (KMDA)। এবার হায়দ্রাবাদের একটি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কলকাতা এবং লাগোয়া ৫টি পুর এলাকায় (হাওড়া, বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম, কামারহাটি, বালি) কী কী ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, তার পরিমাণ কত এবং এই প্লাস্টিককে কাজে লাগিয়ে কী কী তৈরি করা যায়, সেটাই খতিয়ে দেবে ওই সংস্থাটি। যার ভিত্তিতেই নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন। KMDA-র এক কর্তা বলেন, “পুনের মতো শহরে প্লাস্টিককে পুনরায় ব্যবহার করে রাস্তার আলো জ্বলছে। টি শার্ট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে যেমন সরকারের আয় হচ্ছে তেমনই বিদ্যুৎের বিলও সাশ্রয় হচ্ছে।”
বিক্ষিপ্তভাবে প্লাস্টিক-সহ বাকি নানা বর্জ্যকে ব্যবহার করে ধাপায় বায়ো গ্যাস, সার তৈরির প্রকল্প আগেই চালু করেছে কলকাতা পুরসভা। তবে, নিউ টাউন ছাড়া শুধু প্লাস্টিককে পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ এখনও সেভাবে কোথাও নেওয়া হয়নি। KMDA সূত্রে খবর, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার হয় যে ৫টি পুর এলাকায় সেখানেই হবে সমীক্ষা। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে মূলত তৈরি হয় টি শার্ট। আবার, প্লাস্টিকের প্যাকেটকে পুনরায় ব্যবহার করা যায় রাস্তা তৈরির কাজে। ফলে, রাজ্যের ওই ৫ পুর এলাকায় কোন ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি তা জানাটা বেশি প্রয়োজন। কারণ, তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে সুবিধে হবে। বর্তমানে এই এলাকার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বড় অংশই যায় ছত্তিশগড়, বিহারের সিমেন্ট কারখানাতে। তা থেকে সেভাবে আয় হয় না রাজ্যের। সে-কারণেই বিকল্প জিনিস তৈরি করতে চাইছে রাজ্য।
পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, “১২ টি পেট বোতলের সাহায্যে একটি টি শার্ট তৈরি করা যায়। এর ফলে ২৫০ গ্রামেরও বেশি বর্জ্যের পরিমাণ কমানো যায়। তাছাড়া, পেট বোতলকে পুনরায় ব্যবহার করে টি শার্ট তৈরি করলে জলের খরচ যেমন কমে, তেমনই কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মেশাও ঠেকানো যায়। রাজ্যের বড় শহরগুলিতে এই পরিকল্পনা ভীষণ জরুরি।”
তবে কলকাতা (Kolkata) এবং লাগোয়া এলাকায় যে ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার হয় তা মূলত সিমেন্ট, বিদ্যুৎ এবং টি শার্ট তৈরির ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত বলে দাবি বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সাধন ঘোষের। তিনি বলছেন, “যেভাবে প্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়ছে তাতে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে না তুললে আগামীদিনে দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে। তাছাড়া, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনই আয় করতে পারবে রাজ্য।”
প্লাস্টিক থেকে কী ক্ষতি ? দূষিত হয় বাতাস, নিকাশির পথ বন্ধ করে দেয়, মাটিতে মিশে উর্বরতা কমায়, জলজ প্রাণী এবং গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।