পরিবার সূত্রের খবর, রুবাইয়ের ২টি কিডনিই বিকল। বছর খানেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। বাইরে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর বর্তমানে কিছুটা সুস্থই ছিল সে। তার মা বেবী রজক বলেন, আগামী ৬ তারিখ ছেলের একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কিছুক্ষণ বাদে মাকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিজে বাইক চালিয়েই রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আসে রুবাই। কিন্তু তারপরই ঘটে বিপত্তি। হাসপাতালের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন রুবাইয়ের মা। তিনি জানান, হাসপাতালে পুরুষ বিভাগে ঢোকানোর পর কোনও রকম চিকিৎসা হয়নি। ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট বাড়লেও অক্সিজেন দেওয়ার কোনও সুষ্ঠ ব্যবস্থা ছিল না সেখানে। প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিকল। কোনও নার্স-ওয়ার্ড বয় কেউই এগিয়ে আসেনি উলটে এমন দুঃসময় এক নার্স দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ মৃতের মায়ের।
ফলে বিনা চিকিৎসায় ছেলেটি ছটফট করতে থাকে, নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে অনর্গল। বেশ কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থেকে মৃত্যু হয় রুবাই রজকের। এরপরই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের মা। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি ওয়ার্ড বয় ও নার্সদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রঞ্জন কর নামের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অপর এক রোগী। তিনি বলেন, চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। হাসপাতালের তরফে কোনওরকম পরিষেবা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন রঞ্জন বাবু।
যদিও এবিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ কর্তব্যরত নার্সরা।ওয়ার্ডে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ছুটে আসে পুলিশ বাহিনী। পুলিশের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। তবে মেডিক্যাল কলেজের মত একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এমন পরিষেবা ঘিরে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। জরুরিকালীন ন্যূনতম পরিষেবায় কেন এমন গাফিলতি হল তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ ছড়িয়েছে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। মৃত রুবাই রজক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শহর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সে কারণে এদিন হাসপাতালে ভিড় জমান সংগঠনের কর্মীরা। উপস্থিত হন সংগঠনের জেলা সভাপতি অনুপ কর। এই ঘটনার তদন্তের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান রায়গঞ্জ পুরসভার উপ পুর প্রশাসক অরিন্দম সরকার। তিনি হাসপাতালে পৌঁছে মৃতের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও সমবেদনা জানান তিনি। এ ধরনের ঘটনার জেরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অরিন্দম বাবু। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসক-নার্সের গাফিলতির জেরে চলে গেল একটি তরতাজা প্রাণ। রুবাই রজক স্নাতকোত্তর
প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন। এমন একটি ছেলেকে শুধুমাত্র চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে প্রাণ হারাতে হল। সরকারি এই হাসপাতালে সমস্ত রকম সুবিধে রয়েছে। কিন্তু সঠিক সময়ে অক্সিজেন না দেওয়ার কারণে মৃত্যু হল তার। যাকে চরম গাফিলতির চরমতম সীমা বলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন অরিন্দম সরকার। অন্যদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।তদন্ত করে গাফিলতির প্রমাণ পেলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।