ঝাড়খণ্ড ১৭৩ ও ২২১
বাংলা ৩২৮ ও ৬৯/১
বাংলা জয়ী ৯ উইকেটে
ম্যাচের সেরা আকাশ দীপ ৪/৬২, ২/৪৬
সব্যসাচী বাগচী: মনে করা হয়েছিল ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) চতুর্থ দিন সকালের দিকেই খেল খতম করে দেবে বাংলা (Bengal)। তবে সেটা হল না। জয় পেতে লেগে গেল পুরো প্রথম সেশন। চার মেরে উইনিং শট নিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran)। লোয়ার অর্ডারে সুপ্রিয় চক্রবর্তী (Supriya Chakraborty) ও রাহুল শুক্লা (Rahul Shukla), মনোজ তিয়াওরির (Manoj Tiwary) দলের অপেক্ষা বাড়ালেন। যদিও এতে ঝাড়খণ্ডকে (Jharkhand) ৯ উইকেটে হারিয়ে চলতি রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy 2022-23) সেমি ফাইনালে চলে যেতে বাংলাকে বেগ পেতে হয়নি। গত মরসুমেও মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) রাজ্যদলকে হারিয়ে শেষ চারে গিয়েছিল বাংলা। এবারও যেন সেই ম্যাচের রিমেক ঘটল। মেগা ফাইনালের আগে আর একটা মাত্র হার্ডেল। বাংলার বিপক্ষে কোন দল খেলবে? মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) না অন্ধ্রপ্রদেশ (Andhra Pradesh)? সেটাই এখন দেখার।
শেষ দিনের সকালেও বঙ্গ পেসারদের দাপট বজায় ছিল। এদিন ৭ উইকেটে ১৬২ রানে মাঠে নেমেছিল ঝাড়খণ্ড। শুরুতেই শাহবাজ নদিমকে ফিরিয়ে দেন মুকেশ কুমার। এরপর বিপক্ষের লোয়ার মিডল অর্ডার কিছুটা লড়াই করলেও, ঝাড়খণ্ডের ইনিংস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সুপ্রিয় ও রাহুল নবম উইকেটে যোগ করলেন ৫৬ রান। সেই সুবাদে ২২১ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে বাংলার টার্গেট দাঁড়ায় ৬৭ রানের।
সেই রান তুলতে বঙ্গ ব্যাটারদের বেগ পেতে হয়নি। তবে প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ব্যর্থ হলেন কাজী জুনেইদ সইফি। তিনি ৪ রানে ফিরে যান। এরপর ১ উইকেটে প্রয়োজনীয় ৪৬ রান তুলে, দলকে ৯ উইকেটে জয় এনে দেন অভিমন্যু ও সুদীপ ঘরামি। অভিমন্যু ৩১ বলে ২৮ ও সুদীপ ৩০ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
(অভিমন্যু ও সুদীপের ব্যাটে শেষ চারে বাংলা। ছবি : সিএবি)
দ্বিতীয় দিনের শেষে ৬৫ রানের লিড পেলেও পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল বাংলা। স্বভাবতই বঙ্গ শিবিরে ছিল টেনশন। কারণ দল প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও, ৫ উইকেটে বাংলার রান ছিল ২৩৮। তবে তৃতীয় দিন শাহবাজ আহমেদের (Shahbaz Ahmed) লড়াকু ৮১ রান পুরো খেলা বদলে দিয়েছিল। আর বাকি কাজটা সেরেছিল বঙ্গ পেস অ্যাটাক। ফলে গতবারের মতো এবারও বাংলার সেমি ফাইনালে চলে গেল।
এবার প্রশ্ন হল সেমি ফাইনালে বাংলার প্রতিপক্ষ কে? ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে শেষ চারের ম্যাচ। চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে চলছে মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) ও অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই ম্যাচে জয়ী দলের বিরুদ্ধে সেমি ফাইনাল খেলবে বাংলা। যদি গতবারের চ্যাম্পিয়ন মধ্যপ্রদেশ এই ম্যাচ জিতে যায়, তাহলে বাংলাকে হোলকার স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলতে হবে। তবে হনুমা বিহারীর (Hanuma Vihari) দল ম্যাচটা জিতে গেলে, তাহলে বাংলা ফের একবার ইডেনে খেলার সুযোগ পাবে।
তৃতীয় দিন ক্রিজে নেমে শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন শাহবাজ। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন অভিষেক পোড়েল। তবে বেশিক্ষণ সেই জুটি স্থায়ী হয়নি। ৩৩ রানে ফিরে যান বঙ্গ উইকেটকিপার। ২৫৬ রানে ৬ উইকেট হারায় দল। লোয়ার অর্ডারের বাকিরা তেমন রান করতে না পারলেও, শাহবাজ একাই বিপক্ষের বোলারদের বুঝে নেন। শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে ৮১ রানে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মারেন ৯টি চার ও ২টি ছক্কা। তাঁর ইনিংসের সুবাদেই প্রথম ইনিংসে ৩২৮ তুলে, ১৭৩ রানের মূল্যবান লিড পেয়েছিল বাংলা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষে ৭ উইকেটে ১৬২ রান তুলেছিল ঝাড়খণ্ড। প্রথম ইনিংসে ৬২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন আকাশ দীপ। এবার নিলেন ৪৬ রানে ২ উইকেট। বিপক্ষের দুই ওপেনারকে ফেরান ঈশান ও আকাশ। এরপর মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরান আকাশ ঘটক। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নিয়ে সবার নজরে এসেছিলেন এই তরুণ। এবার আকাশ ঘটক ২১ রানে ৩ উইকেট নিলেন। পিছিয়ে ছিলেন না শাহবাজও। ব্যাট হাতে সফল হওয়ার পর ৪৫ রানে নিলেন ২ উইকেট। মারকুটে মেজাজে থাকা অনুকুল রায় ও বিরাট সিংকে ফেরান তিনি। তৃতীয় দিনের শেষে অপরাজিত সুপ্রিয় চক্রবর্তী (৫ রান) ও শাহবাজ নাদিম (৪ রান)। তবে চতুর্থ দিনের শুরুতে শাহবাজ ফেরার পর, দুই পেসার রাহুল শুক্লা ও সুপ্রিয় চক্রবর্তী দ্রুত রান তুলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে লাভ হয়নি। বিপক্ষের হার ছিল সময়ের অপেক্ষা। আর সেটাই হল।
শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি সিএবি-র প্রতিষ্ঠা দিবস। গোটা ক্লাব হাউস জুড়ে সাজো সাজো রব। ফুল, আলো দিয়ে সেজেছে ইডেন গার্ডেন্স। বাংলা শিবিরেও উৎসবের ছোঁয়া। কারণ চলতি মরসুমে বিজয় হাজারে ট্রফি ও সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে অসফল হওয়ার পর, দল যে লাল বলের ক্রিকেটে ফের ধারাবাহিকতা দেখাল। বজায় রাখল দাপট। সেমি ফাইনালের যুদ্ধে নামার আগে মনোজ তিওয়ারি-লক্ষ্মীরতন শুক্লাদের অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে।