শুভপম সাহা: আচ্ছা জীবনে কি ম্যাজিকে বিশ্বাস করেন? মানে ধরুন, অসম্ভব কিছু ঘটনা, এক অদৃশ্য জাদুবলে সম্ভব হয়ে গেল! যার কোনও ব্যাখ্যা নেই! আপনার উত্তর হ্যাঁ বা না-তে হবে। হয়তো শব্দটিও এক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন উত্তর দেওয়ার জন্য। তবে খাস কলকাতার মেয়ে বৈশাখী সাহা (Baisakhi Saha) একটু বেশিই বিশ্বাস করেন ‘মিডাস টাচ’-এ! মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে আমেরিকা ঘুরে বেড়িয়েছেন বৈশাখী। বিগত কুড়ি বছরে তাঁর জীবনে ঘটে গিয়েছে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা। নিয়তি বৈশাখীর সঙ্গে এমন সব খেলা খেলেছে যে, বৈশাখী দুই মলাটে তাঁর এদেশ সেদেশ ঘোরার অভিজ্ঞতা আর না লিখে পারেননি। সম্প্রতি ৪৬ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় (46th International Kolkata Book Fair 2023) প্রকাশিত হয়েছে বৈশাখীর প্রথম বই ‘লাইফ ইজ অ্যাব্রাকাড্যাব্রা’ (Life Is Abracadabra)। দ্বিতীয় বই নিয়েও শুরু করে দিয়েছেন কাজকর্ম।
বৈশাখী এই প্রথম বই লিখলেন ঠিকই, তবে তাঁর কিন্তু একাধিক পরিচয় রয়েছে। তিনি একদিকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়ী বক্তা, জার্মান উদ্যোগতি, ইংরেজির শিক্ষিকা ও স্প্যানিশ অনুবাদক। ১৭ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য় কলকাতা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়া বৈশাখী টেড টকের মঞ্চ মাতিয়েছেন ছ’বার। বৈশাখী বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের আগে প্রেস কর্নারে বসে জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের সঙ্গে মন খুলে আড্ডা দিয়েছিলেন। নিজের জীবনের গল্প এবং বই লেখার নেপথ্যের কাহিনিও শোনালেন তিনি। বৈশাখীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, হঠাৎই বই লেখার কথা কেন ভাবলেন তিনি! বৈশাখী বলছেন, ‘দেখুন আমি এই সল্টলেকেই বড় হয়েছি। যদিও সম্প্রতি বাবা-মা নিউটাউনে শিফট করেছেন। আপাতত থাকছি কোস্টারিকায়। আমি সেই ১৭ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে, কখনও দু’বছর তো কখনও চার বছর থেকেছি। সেই সময়ে আমার জীবনে অদ্ভুত সব ম্যাজিকাল ঘটনা ঘটে যায়। সেগুলো সবার সঙ্গে ভাগ করে নেব বলেই বই লিখি। আমি জীবন সম্বন্ধে যা ভেবেছি বা আমাদের যা শেখানো হয়েছে, সেই দৃষ্টিভঙ্গিই পুরো বদলে যায়। এটাই শিখেছি অভিজ্ঞতা থেকে। একেবারে মাইন্ডসেটই পালটে যাবে। বিপদটাও যেন বিপদের ভাষা হারাবে। কোথাও মনে হবে একটা ডিভাইন ইন্টারভেন্স! যা বার করে আনল বিপদ থেকে। তাই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে আমি জাদুর গল্প বলি। এই বইটা কিন্তু আমি স্বপ্নে দেখেছি। কখনও ভাবিনি এরকম ২১টি গল্প লিখব। এক-দু’টো লেখা প্রকাশকদের পাঠানোর পরেই তাঁরা লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের বলাতেই বই লিখে ফেলি। বইয়ের নামেই রয়েছে অ্যাব্রাকাড্যাব্রা। এটা হিব্রু শব্দ, মানে আমি যা বলছি, তাই সৃষ্টি হচ্ছে।’
প্রেস কর্নারে নিজের বই হাতে বৈশাখী (নিজস্ব চিত্র)
বৈশাখী তাঁর এত বছরের যাত্রার গল্পও কিছু ভাগ করে নিয়েছেন। বৈশাখী বলছেন, ‘ক্লাস টেন শেষ করার পর আমি স্কলারশিপ পেয়ে সিঙ্গাপুরে চলে গিয়েছিলাম ১৭ বছর বয়সে। ওখানে জুনিয়র কলেজে ইলেভেন-টুয়েলভের পড়াশোনা শেষ করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে চার বছর ছিলাম ওখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের সঙ্গেই জার্মানি ভাষা শিখতাম। বিদেশ থেকে অনেক পড়তে আসত সিঙ্গাপুরে। এক-দুই সেমিস্টার পড়ে ওরা চলে যেত। জার্মান শেখার ফলে অনেক জার্মানদের সঙ্গে আলাপ হয় তখন। ওরা ছুটি পেলেই হাতে ম্যাপ ও লোনলি প্ল্যানেট গাইডবুক নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। যে কোনও একটা দেশ বেছে ওরা এক্সপ্লোর করত। ব্যাপারটা আমার দারুণ লেগেছিল। ওরাই ছিল আমার ভ্রমণের অনুপ্রেরণা। ওভাবেই শুরু হয় আমার জীবন দেখা। ভারতে তো অল্পবয়সী মেয়েদের বাড়ির বাইরেও বেরোতে দেওয়া হয় না। আর আমি সব জায়গায় একা থেকেছি। ভেনেজুয়েলা ভয়ংকর একটা জায়গা। সেখানে আমার মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে সব লুঠ করে নেওয়া হয়েছিল। ওখান থেকে গায়ে কোনও আঁচড় না লাগিয়ে বেরিয়ে এসেছি, তাও কারোর সাহায্য ছাড়া। সেই গল্পই কিন্তু এই বইতে আছে। ২০০৭ সালে তখন আমার অনেক অল্প বয়স। নাইজেরিয়াতে ছিলাম সে সময় দেড় বছর। সর্বস্ব খুইয়ে ছিলাম ডাকাতিতে। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছি, কিন্তু বেরোনোর কোনও রাস্তা নেই। এরকম সময়ে ঈশ্বরের অদৃশ্য ছোঁওয়ায় সব বদলে গিয়েছে। বইতে আমার এই অভিজ্ঞতাগুলিই পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে।’
বৈশাখীর বইয়ের সম্বন্ধে দু’টি কথা বলে দেওয়া যাক। হে হাউজ পাবলিশার্স ইন্ডিয়া এই বইয়ের প্রকাশক। বইমেলায় পেঙ্গুইন ও অক্সফোর্ডের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ‘লাইফ ইজ অ্যাব্রাকাড্যাব্রা’। আপনি চাইলে অ্য়ামাজন থেকে কিন্ডল (২৪৯ টাকা) ও পেপারব্যাক (৩১৯ টাকা) সংস্করণও কিনতে পারেন। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। আরও সাতদিন বইমেলা চলবে। ফলে চাইলেই আপনি বইমেলায় ঢুঁ মেরে বৈশাখীর জীবনের গল্পের হদিশ পেয়ে যাবেন।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)