কারও ফোন সুইচড অফ। কারও ফোন তুলছেন অন্য কেউ। কিন্তু নেতাদের দেখা নাই! এই সে দিনের কথা, কখনও আলো নিভত না ভাঙড়ের তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। মাত্র ক’দিনেই চেনা ছবিটা বদলে গিয়েছে। কারণ, রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় গত দু’দিনে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে শাসক দলের অন্তত ছ’জন নেতা-কর্মীকে। খোঁজ চলছে ওই ঘটনায় জড়িত অন্য নেতা-কর্মীদের। এই ঘটনার পর থেকেই দেখা মিলছে না হাতিশালার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। এলাকায় অসুস্থ জুলফিক্কর মোল্লা ছাড়া আর কোনও তৃণমূল নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। ২১ জানুয়ারি আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে হাতিশালায় আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেখানকার সিক্স লেন লাগোয়া তৃণমূলের তিনটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও একটিতে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল আইএসএফের বিরুদ্ধে। সিক্স লেন রাস্তার পূর্ব প্রান্তে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা জুলফিক্কর মোল্লার দলীয় কার্যালয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মার খেয়ে জুলফিক্করও হাসপাতালে ভর্তি হন। বাড়ি ফিরলেও তিনি অসুস্থতার জন্য কার্যালয়ে বসতে পারছেন না। অভিযোগ, তাঁর অনুগামীরাও পুলিশের ভয়ে কার্যালয়ের তালা খুলতে পারছেন না।
জুলফিক্করের অফিসের উল্টোদিকে শাসকদলের আর এক দাপুটে নেতা আরাবুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ ভাঙড়-২ ব্লকের আইএনটিটিইউসি নেতা শামিমউদ্দিনের কার্যালয়। কয়েক দিন আগেই শামিম কার্যালয় মেরামত করে বসতে শুরু করলেও তৃণমূল কর্মীরা একে একে গ্রেপ্তার হওয়ায় তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন-এমনটাই শোনা যাচ্ছে। শামিমের ফোন সুইচড অফ। শামিমের অফিস থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে যুব নেতা রশিদ মোল্লার কার্যালয়। সেটিও তালাবন্ধ। অনেক চেষ্টার পরে ফোনে ধরা গেল রশিদকে। তিনি বললেন, ‘কী আর বলবো, পুলিশের খুব চাপ। পুলিশ বেছে বেছে আমার ছেলেদের ধরছে।’ সাপুরজি মোড়ের কাছে ভাঙড়ের আর এক নেতা সাবির শেখের দলীয় কার্যালয়ও বন্ধ। সাবিরের ফোনও সুইচড অফ। চারটি কার্যালই শুনশান। এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা জানাচ্ছেন, দাদাদের কেউ সুন্দরবন, কেউ দিঘা-মন্দারমণি চলে গিয়েছেন।
তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামের মোবাইলও দু’দিন পরিষেবা সীমার বাইরে। হোয়াটসঅ্যাপ কলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, এখনও বলছি আমাদের ছেলেদের কোনও দোষ নেই। পুলিশ অকারণে ওদের গ্রেপ্তার করছে। আমি বাইরে আছি, বাড়ি ফিরে কথা বলব দলের সঙ্গে।’ আরাবুল বিরোধী রেজাউল করিমও বলেন, ‘পুলিশ অযথা আমাদের ছেলেদের হয়রান করছে, দলের শীর্ষ নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি।’