জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ঘোষণার ২ দিন পরে একেবারে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল কেন্দ্র। ভ্যালেন্টাইনস ডে-র দিনটিকে গোরু আলিঙ্গন দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় পশু কল্যাণ বোর্ড। শুক্রবার তা বাতিল করল বোর্ড। এমন আজব ঘোষণা ও তা শেষপর্যন্ত তুলে নেওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে তুলোধনা করলেন বিশিষ্ট কলামাস্টি ও লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন-ভেস্তে গেল কেন্দ্রের ‘গোরু আলিঙ্গন দিবস’, জেনে নিন কেন
শুক্রবার আপনায় রায় অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের গোরু আলিঙ্গন দিবস নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। চন্দ্রিল বলেন, গোরু আলিঙ্গনে বেশ ঝামলো রয়েছে। প্রথম কথা হল আজকালকার দিনে কারও সম্মতি ছাড়া কাউকে আলিঙ্গন করা যায় না। আমরা না হয় গোরুকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছি, গোরুর কি জড়াজড়িতে সম্মতি রয়েছে? আমরা তো জানি গোরু আমাদের মা। কিন্তু গোরু কি জানে সে আমাদের মা? হয়তো জানে না। গোরু হয়তো মনে করে, এ হয়তো অন্য একটা প্রজাতির অত্যন্ত শয়তান প্রাণী, যে রোজ গোরুর বাচ্চাকে বঞ্চিত করে নিজের বাচ্চাকে খাওয়ায়। গোরুকে গলায় দড়ি বেঁধে টানতে চানতে নিয়ে যায়। খোঁটায়ে বেঁধে রাখে। কখনও গাড়িতে জুতে দেয়। ফলে হয়তো গোরুর কাছে আমরা সন্তান নই। গোরুর কাছে আমরা হয়তো প্রভু। অত্যাচারী।
এখানেই থেমে থাকেননি চন্দ্রিল। কেন্দ্রের ওই আজব নিদান নিয়ে চন্দ্রিল বলেন, এখন গোরু যদি দেখে অত্যাচারী প্রভু জোরে ছুটে আসছে মাতাজি মাতাজি বলে জড়াতে তখন সে হয়তো ঘাবড়ে যেতে পারে। আত্মরক্ষার্থেই সে হয়তো গুঁতিয়ে দিতে পারে। এবার পেটে যে ফুটো হবে বা কপালে যে রক্তপাত হবে তার দায় কে নেবে? সেই খরচ কে নেবে? এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রশ্ন। তারপর এরকম হতে পারে যে গোরুর অত্যন্ত নার্ভাস লাগল। কারণ আসমুদ্র হিমাচল থেকে প্রচুর লোক আসছেন আলিঙ্গন করতে আসছেন, এসব দেখে গোরু নার্ভাস হয়ে গেল হয়তো। এতটাই নার্ভাস হল যে হয়তো তার দুধটা কেটে দই হয়ে গেল। ফলে তারপরদিন যে বিশাল আর্থিক ক্ষতি তার দায় কে নেবে? এমনিতেই আদানি নিয়ে একটা ঝঞ্ঝাট চলছে তার উপরে একটা বিশাল ব্যবসায়িক ক্ষতি যদি ভারতের ঘাড়ে চড়ে বসে তাহলে তার পরিত্রাণ কী করে হবে। এইসব আর্থ সামাজিক বিষয়গুলির সঙ্গে আরও কিছু ব্যবহারিক প্রশ্ন রয়েছে। তা হলে একটা দু’পেয়ে জানোয়ার একটা চারপেয়ে জানোয়ারকে জড়াচ্ছে। তাহলে কী করে জড়াবে? তাহলে কী দুপা এগিয়ে গিয়ে হাঁড়ির মতো মুখটাকে জড়িয়ে ধরবে? তাহলে তো তার শিংটা পেটে ফুটে যাবে। নাকি গোরুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে দু’পায়ে হাঁটতে বা জড়াতে? গোরু মা বটে কিন্তু বুদ্ধিমতী মা হিসেবে খুব একটা পরিচিত নয়। তাহলে গোরু কতদিনে সেই প্রশিক্ষণ পাবে? এই ১৪ তারিখের মধ্যে কি? নাকি সামনের বছর পর্যন্ত লাগবে? সেই জন্যই কি একটু বেশি সময়ে দেওয়া হল? এইসব একাধিক প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজে বের করতে হবে তার পর ভাবতে হবে ওই দিনটা গোরু জড়াও দিবস হিসেবে ঘোষণা করা আদৌ উচিত হয়েছিল না হয়নি।