বুধবার দুপুরে হাওড়ার পাঁচলায় একটি সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে দুয়ারে ডাক্তারের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। জানান, পিজি শুরু করেছে। এ বার অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিও একই পথে হাঁটবে। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বুঝে নিয়ে সময় নষ্ট করেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। বিকেলেই কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ-অধিকর্তাদের স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকে তলব করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। বৈঠকে ছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যও। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, উত্তর ২৪ পরগনা ও পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার দায়িত্ব নেবে আরজি কর। কলকাতা মেডিক্যালের জন্য হাওড়া ও হুগলি, এনআরএসের জন্য নদিয়া ও বীরভূম, পিজি-র জন্য সুন্দরবনের মতো এলাকার পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলা, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ন্যাশনালের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ধার্য হয়।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে, কোথায় শিবির করলে মানুষের বেশি উপকার হবে। যে এলাকা যত প্রত্যন্ত কিংবা যেখানে যত সুযোগ-সুবিধা কম, শিবিরের জন্য সেই এলাকা তত অগ্রাধিকার পাবে। সেখানে যাবেন পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ডার্মাটোলজি, ইএনটি, পেডিয়াট্রিক, জেনারেল মেডিসিনের মতো ব্রড স্পেশ্যালিটির পাশাপাশি সেই চিকিৎসক দলে থাকবেন কার্ডিয়োলজি, গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, নিউরোলজির মতো সুপার-স্পেশ্যালিটি শাখার বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আমরা অন্তত দু’মাসের সূচি বানিয়ে ফেলব, আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে। পরে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে সংশ্লিষ্ট জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিকেও। সেখান থেকে ব্রড স্পেশালিটি শাখার চিকিৎসকদের নেওয়া হবে প্রস্তাবিত চিকিৎসক দলে।’
তবে এই কর্মসূচির জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর ক্ষতি হবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসক সংগঠনের অনেকে। সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে প্রচলিত ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা-ও এ রকম একটি জনমোহিনী পরিকল্পনা করা হচ্ছে!’ ওই সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, প্রত্যন্ত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য (প্রাইমারি টিয়ার) থাকবে, মফস্সল শহরে মধ্যমবর্গীয় স্বাস্থ্য (সেকেন্ডারি টিয়ার) আর বড় শহরে মেডিক্যাল কলেজ স্তরের (টার্সিয়ারি টিয়ার) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থাকবে, এটাই কাম্য এবং তা বিজ্ঞানসম্মতও বটে। সেই মতোই রেফারেল ব্যবস্থা চালু। অন্যথা হলে হিতে বিপরীতই হবে।