হলদিয়া বন্দরে (Haldia Port) কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের জমিতে ‘স্মার্ট সিটি’ (Smart City) তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক (Union Ministry of Shipping)। তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, হলদিয়ায় বন্দর নির্মাণের জন্যে এক সময় স্থানীয় কৃষকদের থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি নিয়েছিল সরকার। শহর গড়ার নামে সেই মূল্যবান জমি বেসরকারি প্রোমোটিং সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে হলদিয়া বন্দরের সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, ‘আমরা মনে করছি, এটা হলদিয়া বন্দর ধ্বংস করার প্রথম পদক্ষেপ। এ ভাবে যদি জমি নিয়ে নেওয়া হয় তা হলে ভবিষ্যতে যখন বন্দর সম্প্রসারণের দরকার পড়বে, তখন চাইলেও সেটা আর সম্ভব হবে না।’ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টদের স্বার্থ পূরণ করাই এই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। তা না হলে এই রকম জনস্বার্থ-বিরোধী পদক্ষেপ করত না।’
কলকাতা বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সের (haldia dock complex) মধ্যে পড়ে থাকা ১৭০ একর জমিতে ‘স্মার্ট পোর্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক। পরিকল্পনা অনুসারে, স্মার্ট সিটিতে যা যা সুবিধা থাকার কথা, সবই মিলবে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় বাড়িঘর তৈরি হবে। হবে নতুন রাস্তাঘাট। থাকবে আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা। মিলবে ২৪ ঘণ্টা পানীয় জল। থাকবে শপিং মল, সিনেমা হল, খেলার মাঠ, কনভেনশন সেন্টার এবং আধুনিক হাসপাতাল। পুরো শহর হবে পরিবেশবান্ধব। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই স্মার্ট সিটি গড়ে উঠবে। তার প্রথম ধাপ হিসেবে পরামর্শদাতা নিয়োগে কয়েক দিন আগেই টেন্ডার ডেকেছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এর আগেও অবশ্য হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সের জমি বেসরকারি সংস্থাকে দীর্ঘমেয়াদি লিজে দেওয়া হয়েছিল। একই ভাবে কলকাতার খিদিরপুর ডকে বেশ কিছু পুরনো শেড বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। কলকাতার গঙ্গার ধারেও বন্দরের জমিতে পিপিপি মডেলে ‘ক্রুজ টার্মিনাল’-সহ একাধিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে। সবক’টিই হবে বেসরকারি উদ্যোগে। কেন্দ্রের এই নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তবে বন্দরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, বন্দরের হাতে অনেক অব্যবহৃত জমি রয়েছে। যেগুলি কোনও কাজে লাগে না। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে বহু জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। গঙ্গার নাব্যতা কমে যাওয়ায় খিদিরপুর এবং হলদিয়া ডকে আগের মতো বড় জাহাজও ঢুকছে না। পারাদ্বীপ সমুদ্র বন্দরের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ সম্পূর্ণ হলে হলদিয়ায় জাহাজের সংখ্যা আরও কমবে। এই অবস্থায় অব্যবহৃত জমির সদ্ব্যবহার করে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে জাহাজ মন্ত্রক। বিরোধীদের প্রশ্ন নিয়ে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘তৃণমূল নিজেরাও কিছু করবে না, আর কেন্দ্র উন্নয়নের কোনও কাজ করলে তাতে বাধা দেবে! বন্দরের ফাঁকা জমিতে স্মার্ট সিটি হলে অসুবিধা কোথায়?’