এছাড়াও সাধু সন্তরা বেশ কিছু বিষয় জানার পরই এই গত বছর থেকেই এই কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। এই বছরও কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হবে। কয়েকশো নাগা সাধু ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন আখড়া থেকে এই সন্তরাও এখানে হাজির হবেন। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কুম্ভের আয়োজন করা হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি এই কুম্ভস্নান হবে। এর জন্য তৈরি হয়েছে কমিটি। তার মধ্যে সাধুরা ও যেমন আছেন, সেই সঙ্গে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার (Bansberia Municipality) চেয়ারম্যানও যুক্ত আছেন।
জেলা প্রশাসন ও রাজ্য প্রশাসনও এই মেলার সঙ্গে যুক্ত হবে। নিরাপত্তার বিষয়টিও জোরদার করা হচ্ছে। ত্রিবেণী শিবপুর মাঠে বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করা হবে। স্তত্ৰ পাঠ থেকে গঙ্গা আরতি করা হবে। গত বছর এর সূচনা হলেও এই বছর কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৩ লাখ মানুষের সমাগম হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। মহামন্ডলেশ্বর পরমহংস স্বামী পরমাত্ম নন্দজী মহারাজের কথায়, রঘুনন্দনের প্রায়শ্চিত্ত তত্ব গ্রন্থে ত্রিবেণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই বইয়ে উত্তরে প্রয়াগ রয়েছে এলাহাবাদে। অন্যদিকে দক্ষিণে প্রয়াগ রয়েছে এই ত্রিবেণীতে। এটাই কুম্ভের উপযুক্ত স্থান। স্থানীয় ইতিহাসবিদ অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ত্রিবেণী কুম্ভ মেলার সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার একটা যোগ ছিল। তৎকালীন সাধুসন্তরা, গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হওয়ার পর তারা পদব্রজে ত্রিবেণীতে আসতেন। মাঘ সংক্রান্তি অর্থাৎ বিষুব সংক্রান্তির দিন তারা স্নান করতেন। এই দিনটাকেই অনুকূম্ভ হিসেবে ধরা হত ত্রিবেনীতে। সপ্তগ্রাম ও ত্রিবেণী শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি ছিল। তেমনি পূর্ব ভারতে সপ্তগ্রাম বড় বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্টিত।”
পরবর্তীকালে মুসলিম আক্রমণের ফলে এখানকার মন্দির এবং তীর্থস্থান নষ্ট হয়ে যায়। পন্ডিতরা এখান থেকে চলে যান। ত্রিবেণী যেহেতু গঙ্গার মুক্ত বেণী সেই কারণে এই জায়গাটার আলাদা গুরুত্ব ছিল। সেই কারণেই বিভিন্ন সংক্রান্তি সহ হিন্দু ধর্মের নানা আচার আচরণের জন্য স্নান করতে আসতেন বহু মানুষ। তবে এর মধ্যে বিষুব সংক্রান্তি স্নানকেই গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর কিছু সাধু সন্ত মানুষ এই ইতিহাসটাকে অনুসন্ধান করে এখানে আসেন। এখানে কুম্ভ স্নান হয়। এই বছর আবারও মহানির্মাণ আখড়ার প্রধান অনুমোদন দিয়েছেন। কিছু দিন আগে ভূমি পুজোতে নাগা সন্ন্যাসীরা এসেছিলেন। সপ্ত ঋষি ঘাটে স্নান করেছিলেন। এই ঘাটটির আলাদা একটা তাৎপর্য আছে। কাগজের ইতিহাস বলতে যেটা পাওয়া যায় এলান মরিনিস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় পাওয়া যায়। সেখানে তিনি ত্রিবেণীতে কুম্ভ মেলার উল্লেখ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে স্নানের কথা পাওয়া গিয়েছে বহু জায়গায়। সেটা মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব সাহিত্য ,শাক্ত সাহিত্য, সাধারণ বাংলা সাহিত্যেও মেলে এর উদাহরণ।
বাঁশবেরিয়া পুরসভার (Bansberia Municipality) চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী বলেন, “গতবছর পরিকল্পনা না থাকায় সেভাবে করা যায়নি। ত্রিবেণী উন্নয়ন পরিষদ বলে একটা কমিটি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনকে আমরা জানিয়েছি। কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। ধর্মীয় স্থানে ও মাঠে সাধুদের রাখা হয়েছিল। এই জায়গার পাঁচটি স্টেশনকে জানান হয়েছে। ত্রিবেণী, মগরা, হুগলিঘাট, ব্যান্ডেল স্টেশনে নজরদারি করতে হবে প্রশাসনকে। মূল স্নানের জন্য সকলের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছি। পবিত্র স্নান বলে মহা মন্ডেলেশ্বরও সাধু এটা করবেন। আমরা সহযোগিতা করব। স্নান সপ্ত ঋষি ঘাট সহ অন্যান্য ঘাটে স্নান হবে। নিরাপত্তা দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।”
