জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কোচবিহারের মাথাভাঙ্গার সভা থেকে বিএসএফের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি এলাকার রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মণকে গুলি করে মেরেছে বিএসএফ। তার দেহে ১৮০টি গুলির টুকরো পাওয়া যায়। যত দূর যেতে হয়ে যাব কিন্তু এর শেষ দেখে ছাড়ব।
আরও পড়ুন-বালিগঞ্জে উদ্ধার বিপুল টাকা কার, রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা ঘনিষ্ঠ মনজিত্ সিংকে সমন ইডির
মাথাভাঙ্গা কলেজ ময়দানের সভায় এদিন গীতালদহের যুবক প্রেমকুমার বর্মণের মৃত্যুর ঘটনা টেনে এনে বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরকে নিশা করেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, দিনহাটা ১ নম্বর ব্লক। গীতালদহ এলাকার ভারবাঁধা গ্রামের রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মণ। বয়স ২৩-২৪ বছর। বেঙ্গালুরুতে কাজ করত। আপনারা কেউ তার নাম শোনেননি। চার বছর পরে বাড়ি ফিরেছিল। গত ২৪ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে সকালে মাঠে ঘুরতে গিয়েছিল। সেই সময় এক কিংবা দু’হাত দূর থেকে বিএসএফের জওয়ানরা তাকে গুলি করে মেরেছে। বিএসএফের উপদ্রব আপনারা সকলে জানেন। রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মণকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে বিএসএফ। কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপি। তারা রাজবংশীদের মেরে তাদের প্রতি দরদ দেখানের চেষ্টা করে। আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিককেও প্রশ্ন করতে চাই, প্রেমকুমার কি জঙ্গি ছিল? তার অপরাধ কী, সে রাজবংশী? তার কাছ থেকে কি বোমা বন্দুক উদ্ধার হয়েছিল? তার কাছ থেকে গোরু পাওয়া গিয়েছিল? নাকি সোনা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল?
অভিষেক বলেন, প্রেমকুমার কি গোরুপাচারকারী নাকি জঙ্গি? ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। তোমাদের অবস্থান স্পষ্ট করো। মানুষের কাছে ক্ষমা চাও। আপনারা কি জানেন, প্রেমকুমারের পোস্টমর্টেম রিপোট হাতে এসেছে। এই রিপোর্ট কেন দেখাচ্ছি জানেন? এই রিপোর্টটা পাওয়ার পর আমি হতবাক। প্রেমকুমারের শরীর থেকে কটা গুলির টুকরো পাওয়া গিয়ছে জানেন? প্যালেট গান, যে বন্দুক দিয়ে আধাসেনা কাশ্মীরের জঙ্গি মারে সেই বন্দুক দিয়ে প্রেমকুমারকে হত্যা করেছে বিএসএফ। কেউ যদি গোরু পাচারকারী হয় তাহলে তাকে লাঠি দিয়ে মারো, বেঁধে রাখো, গ্রেফতার করো। এখানে পুলিস প্রশাসনের আধিকারিকরা আছেন, আমি অনুরোধ করব পরিবারের তরফে এফআইআর হয়েছে। এর আমি শেষ দেখে ছাড়ব। আমি এটি নিয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাব। আমি নিজে এর পেছনে লেগে থাকব। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আমি যেতে রাজী আছি। জানানে মাত্র ২৪ বছরের তরতাজা যুবক প্রেমকুমারের শরীর থেকে ১৮০টি গুলির টুকরো পাওয়া গিয়েছে। এক ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পায়ে গুলি লাগলে তো সাধারণত প্রাণ যায় না। উনি বলেছেন, এত নৃশংসভাবে প্রেমকুমারকে মারা হয়েছে যে তাঁর ৪০ বছরের কেরিয়ারে তিনি এমন কেস দেখেননি। শরীরে রক্ত প্রায় ছিলই না।
প্রেমকুমার বর্মণের বাবা শিবেন বর্মণ ও মা সুখীমনি বর্মনকে মঞ্চে ডেকে নেন অভিষেক। তিনি বলেন, এই বিজেপি যারা কথায় কথায় বাংলা ভাগ করে, ধর্মের নামে রাজনীতি করে, রাজবংশী অন্ত প্রাণ। একবারও প্রেমকুমারের বাড়ি গিয়েছে? এইটুকু মনুষত্ব যদি কারও মধ্যে না থাকে তাহলে তাকে কি ক্ষমা করা উচিত! মায়েরা বলুন। আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি এর শেষ দেখে ছাড়ব। প্রেমকুমারে বাবা শিবেনবাবু বলেন, ওর কাছে তো কিছুই পায়নি কেন তাকে গুলি করে মারা হল? ছেলে যদি দোষ করে থাকে তাহলে তার অন্য সাজা রয়েছে। সরকার তো মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়নি। অভিষেক বলেন, আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলেও কাশ্মীরে যে বন্দুক দিয়ে জঙ্গিদের মারা হয় সেই বন্দুক দিয়ে কি এখানেও মারা উচিত!স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই এলাকার সাংসদ। আমার নাম ভাঙিয়ে পঞ্চায়তে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। যখন জানতে পারলাম তখন ওকে দল থেকে বহিষ্কার করি। আর আমাদের আবর্জনা অন্যদের সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। এখন থেকে আমার উপরে ভরসা রাখুন।