২০১৪-র টেটের পরে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে কুন্তলের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হতো। যে সব পরীক্ষার্থী চাকরি পাকা করতে কুন্তলকে টাকা দিতেন, তাঁদের নাম ওই ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করত। তাতে রোল নম্বর এবং নাম-সহ লেখা থাকত ‘কোয়ালিফায়েড’। কয়েক দিন পরেই ঘটত ‘ম্যাজিক’। অভিযোগ, চাকরিপ্রার্থীরা দেখতে পেতেন, তাঁদের নাম তালিকা থেকে ভ্যানিশ। সিবিআইয়ের কাছে এমন অভিযোগও জমা পড়েছে, প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় প্রতারিতরা কুন্তলকে কিছুই বলতে পারতেন না। তদন্তের প্রয়োজনে এই বিষয়টি নিয়ে কুন্তলকে জেরা করতে চান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এই কারচুপির সঙ্গে পর্ষদের কোনও উচ্চপদস্থ কর্তা জড়িত ছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার অবশ্য পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘২০১৭ সালের টেটের রেজাল্ট পরিবর্তন করা হয়েছে বলে আমার আমলে দু’বার অভিযোগ উঠেছিল। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে সেটা ছিল ফেক ওয়েবসাইট।’
এ দিকে, নিয়োগ মামলার তদন্তে গোয়েন্দাদের হাতে এ রকম ১০০ জন চাকরিপ্রার্থীর রেজাল্টের কপি এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-র টেটে তাঁরা কোয়ালিফাই করেছেন। তবে পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, আসলে প্রতারিত হয়েছেন। প্রাথমিক টেট দুর্নীতিতে ইতিমধ্যেই কুন্তলকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল আগেই দাবি করেছিলেন, তিনি কুন্তলকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রার্থীর থেকে ১৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। তবে সেই পরীক্ষার্থীদের তিনি চাকরি করাতে পারেননি। সেই টাকা ফেরতও দেননি কুন্তল। ওই প্রার্থীদের সঙ্গে ওয়েবসাইট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এরই মধ্যে, কুন্তলের কাছে ২০২২-এর টেটের কিছু ওএমআর শিট পাওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘পর্ষদের কাছে একটি উত্তরপত্র রয়েছে। আপনার কাছে একটি কপি রয়েছে। আপনি যদি সেই কপি কাউকে দেন, কোনও দালালকে বা দুষ্টচক্রকে দেন তা হলে তার দায় সরকারের নয়, পর্ষদেরও নয়। পর্ষদ তো বটেই, আমিও বলছি কোনও দালাল বা দুষ্টচক্রের ফাঁদে যদি পা দেন, তা হলে সেই দালাল বা দুষ্টচক্রের মতো আপনিও সমান অপরাধী। এ রকম কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। নিজের যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের উপরে আস্থা রাখুন।’