পাশাপাশি মায়ানমারের চোরাই পথও তাঁর নখদর্পনে। এমনই এক কুখ্যাত চোরাশিকারি ও গন্ডার নিধনের মূল পান্ডা তথা শার্প শুটার লেকেন বসুমাতারিকে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করল বনদপ্তর ও পুলিশ। লেকেনের দাপটে প্রশাসন এতটাই তটস্থ ছিল যে, অসমের বন দপ্তর তাঁকে দেখা মাত্রই গুলি করার নির্দেশ জারি করে রেখেছিল।
শুধু অসম কেন, ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল জলদাপাড়ার চিলাপাতা রেঞ্জের বানিয়া বিটে একটি পূর্ণ বয়স্ক মাদি গন্ডার নিধনের ঘটনাতেও লেকেনের সরাসরি যোগ থাকার প্রমাণ পেয়েছিল বন দপ্তর। বন কর্তাদের দাবি, ২০১০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত গোরুমারা ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে যতগুলি গন্ডার হত্যার ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন লেকেন বসুমাতারি এবং তাঁর গ্যাং।
এই কারণেই চোরা শিকার রুখতে অভিযানে লেকেনের গ্রেপ্তারিকে বড়সড় সাফল্য বলে মনে করছে বনদপ্তর ও আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার অসমের গোপন ডেরা থেকে লেকেনকে অসমের চিরাঙ জেলা আদালতে পেশ করার পরে দুপুরে আলিপুরদুয়ারের থার্ড জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে পেশ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লেকেনের এক সাকরেদ কিছুদিন আগে ধরা পড়লে তাঁর হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও বেশ কিছু তাজা কার্তুজ। যদিও সে যাত্রায় গন্ডারটির শৃঙ্গ কেটে নিয়ে চম্পট দিতে সক্ষম হয়েছিলেন লেকেন। সম্প্রতি বনদপ্তরের কাছে খবর আসে, জলদাপাড়া কিংবা গোরুমারায় গন্ডার হত্যার নীল নকশা তৈরি করে ফেলেছে এক সময় এনডিএফবি জঙ্গি শিবিরে আগ্নেয়াস্ত্রর প্রশিক্ষণ নেওয়া লেকেন বসুমাতারি।
এরপরেই নড়েচড়ে বসে জলদাপাড়া বনবিভাগ ও জেলা পুলিশ। জানা গিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত লেকেন এবং তাঁর সাকরেদরা এরাজ্যে কমপক্ষে ২৫টি গন্ডার হত্যার সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেশী রাজ্য অসমে চোরাশিকারির ওই দলটি কাজিরাঙ্গা এবং মানস জাতীয় উদ্যানে কমপক্ষে একশটি গন্ডার হত্যা করেছে।
বনদপ্তরকে চোখে ধুলো দিয়ে একের পর এক গন্ডার হত্যা করে, তাদের শৃঙ্গ মনিপুর হয়ে মায়ানমারে পাচার করা হতো। ফলে গন্ডার হত্যা করার পরে প্রতিবার লেকেন মায়ানমারে গা ঢাকা দিতেন। এই চোরা শিকারির সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন গুলির নিবিড় যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
গন্ডারের শৃঙ্গ বিক্রি করে সেই টাকায় কেনা হতো আগ্নেয়াস্ত্র,কার্তুজ ও মারাত্মক বিষ। এমনকী, গন্ডার হত্যার পরে বিভিন্ন জঙ্গি শিবিরে গা ঢাকা দেওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন হিসেবে জঙ্গি নেতাদের হাতেও তুলে দিতে হতো তাঁকে।
জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘যৌথ অভিযানে এই সাফল্য মিলেছে।’ অন্যদিকে, জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ওই কুখ্যাত চোরাশিকারি আমাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে আমরা ওই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।’