এক বা দু’দিন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে চলেছে কীর্ণাহারের যুবুটীয়ার একটি বাড়িতে। এরই জেরে সেই বাড়িতে অশরীরীর ছায়া রয়েছে বলে এলাকায় ছড়িয়েছে জল্পনা।
অবস্থা এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে যে ওই বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। জানা গিয়েছে, কীর্ণাহারের যুবুটীয়ার ওই বাড়ি্তে চক্রবর্তী পরিবারের বসবাস। ওই পরিবারের অন্ততপক্ষে জনা ছয়েক সদস্যের একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এমন জল্পনার সূত্রপাত।
কী ঘটে ওই বাড়িতে?
পরিবারের পাঁচজন মানুষ ওই একই বাড়িতে বিভিন্ন সময় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, ওই পরিবারের আরও এক-দু জন সদস্যকে আত্মহত্যার চরম মুহূর্ত থেকে রক্ষা করা হলেও একাধিকবার তাঁরা নিজেদের শেষ করে ফেলার চেষ্টা করেছেন বলে খবর।
কীর্ণাহার গ্রামের বাসিন্দা ওই পরিবার দরিদ্র হলেও অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। নিত্য বাড়িতে হয় পুজোর্চ্চনা। পেশায় দিন মজুর ওই পরিবার। একসময় পুরানো মাটির বাড়িতেই গোটা পরিবার বসবাস করতেন।
বছর কুড়ি পার
ঘটনার সূত্রপাত বছর কুড়ি আগে, বাড়ির গৃহবধূ সুভাষী চক্রবর্তী গ্রামেরই শিব মন্দিরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর দু’বছর পর থেকেই চক্রবর্তী পরিবারে শুরু আত্মহত্যার ম্যারাথন।
সামান্য সময়ের ব্যবধানে লাগাতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটতে থাকে। মাটির পুরনো বাড়িতেই গলায় দড়ি দিয়ে চক্রবর্তী পরিবারের গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন একইভাবে আত্মঘাতী হন।
শুধু মানুষ নয়, পরিবারের পোষ্য কুকুর বিড়ালেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। ‘অভিশাপ’ কাটাতে বাড়িতে লাগাতার পুজো নাম সংকীর্তনও করা হয়েছে তবু কোনও ফল মেলেনি বলে দাবি।
সম্প্রতি গত ডিসেম্বর মাসেও এই পরিবারের সদস্য বিশু চক্রবর্তী এখানেই আত্মহত্যা করেছেন। চক্রবর্তী পরিবারের এক সদস্যের দাবি, বাইরে কাজ করে বা থাকে, পরিবারের এমন সদস্যেরাও এখানে ফিরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
বাড়ি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
চক্রবর্তী পরিবারের এই করুণ পরিণতি এলাকায় কার্যত আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার জেরে ওই মাটির বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবারের বাকিরা।
ওই জায়গায় নতুন করে থাকা তো দূর, ভাঙা বাড়ির কোনও সামগ্রীও রাখতে চায় না চক্রবর্তী পরিবার। এমনকী ওই জায়গা আর ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের। আর এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা চাইছেন ওই জায়গায় সরকারি বা এলাকাবাসীর উদ্যোগে কোনও মন্দির বা অন্য কিছু নির্মাণ হোক ।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে এই বাড়ির অস্বাভাবিকতা নিয়ে প্রচলিত দাবিকে নিয়ে কোনও সমর্থনযোগ্য জবাব মেলেনি।