বাঁকুড়ার সিমলাপালের নিমডাঙার বাসিন্দা রবি মান্ডি। তিনি পেশায় দিনমজুর। কিছু জমিজমা রয়েছে, তা চাষ করেই দিন গুজরান। টানাটানির সংসার ভালোবাসায় ভরা। নেপথ্যে ছিল তাঁর মেয়ে সুমিত্রা মান্ডি। শান্ত স্বভাবের সুমিত্রা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলোতেও তুখোড়।
রবি এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনার বিয়ের দীর্ঘদিন পর তাঁদের কোল আলো করে আসে সুমিত্রা। কেওটধরা বড়খুলিয়া প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী সে। ৬ ফেব্রুয়ারি জেলায় ৭৫ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় সে। এরপরেই লক্ষ্য ছিল রাজ্য স্তরে পদক জয়। স্কুলের শিক্ষকদেরও নয়নের মণি ছিল এই খুদে।
কিন্তু, আচমকা ছন্দপতন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতেই অসুস্থ বোধ করেন রবিবাবুর স্ত্রী। এরপর তাঁকে সিমলাপাল ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ান সুমিত্রার শিক্ষক কাশীনাথ পাঠকও।
কাশীনাথবাবু ‘এই সময় ডিজিটাল’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “কল্পনাদেবীর পেটে টিউমার হয়েছিল। ১৪ তারিখ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপরেই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। নিয়ে যাওয়া হয় বাঁকুড়া মেডিক্যালে। ১৫ তারিখ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।”
এদিকে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর মেয়েকে জানাননি রবি। রাজ্যের মধ্যে যাতে সেরা হতে পারে সে, তাই দুঃখের রাশ ছোট কাঁধে ফেলে দেননি তিনি। ১৮ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়িতে রাজ্য স্তরের ৭৫ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সে। সেখানে পঞ্চম স্থান অধিকার করে সুমিত্রা। মায়ের মৃত্যুর খবর তখনও জানা ছিল না এই খুদের।
এরপর বাড়ি ফেরার পর তাঁকে চোখের জলে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন রবি। কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। একদিকে মেয়ের সাফল্য, অন্যদিকে স্ত্রীর মৃত্যু, অনুভূতির বিড়ম্বনায় এই প্রবীণ। তিনি জানান, মেয়েকে মানুষ করে তোলাই তাঁর লক্ষ্য।
অন্যদিকে, কাশীনাথ পাঠকও প্রিয় ছাত্রীর জন্য উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। খোঁজ নিয়েছি ওদের। কাল মিড ডে মিলে মাংস ভাত হয়েছিল। ওকে আমার বাইকে চাপিয়ে স্কুলে নিয়ে আসি। এরপর ও একটু বন্ধুদের সঙ্গে খেলেছে। আবার ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। এতটুকু মেয়ে! এখন ওকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখাটাই এখন লক্ষ্য।”