আগামী শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ট্রাম সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ করবে। অথচ, তার আগেই পরিবেশবান্ধব এই গণপরিবহণ শহর থেকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগে ৪১টি রুটে শহরের ৭৬ কিলোমিটার জুড়ে ট্রাম পরিষেবা মিলত।
এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে দু’টি রুটে। প্রায় ১৪ কিলোমিটার জুড়ে ট্রাম চলে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকার শুধু চারটি রুটে ট্রাম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন এক সন্ধিক্ষণে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাছে তাঁর আবেদন পেশ করলেন।
মঙ্গলবার অধিবেশনের শেষ লগ্নে তিনি বলেন, ‘ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য। সেই ট্রাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কলকাতার ট্রাম নিয়ে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। দেখবেন যাতে বন্ধ না হয়ে যায়। আমি কলকাতার মেয়র ও পরিবহণমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বিষয়টি যাতে দেখেন।’
সভায় তখন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ছিলেন না। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমাদের সরকারের কোনও অভিপ্রায় নেই ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু মেট্রো রেলের কাজ ও অন্য কিছু কারণে কয়েকটি রুটে ট্রাম চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
আবার কিছু জায়গায় লাইন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবুও আমি দেখছি কী করা যায়।’ ট্রাম তোলার জন্য পরিবহণ দপ্তর দায়ী করছে কলকাতা পুলিশকে। শহরে যানজট আর গাড়ির শ্লথ গতির জন্য পুলিশ আবার অনেকাংশে ট্রামকেই কাঠগড়ায় তুলছে।
পুলিশের যুক্তি, মেট্রোর কাজের জন্য ট্রাম বন্ধ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট রুটে লাইন রয়ে গিয়েছে। তা থেকে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই যে সব রুটে ট্রাম চলছে না, সেখানে ট্রামের লাইন পিচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে।
এদিকে বামেরা ট্রাম-রক্ষায় ট্রাম কর্মী ও যাত্রীদের সঙ্গে পরিবেশ ও কলকাতার ঐতিহ্যরক্ষায় সরব বিভিন্ন গণসংগঠনকে সামিল করতে চায়। বামেদের বক্তব্য, বিশ্বের বহু শহরে দূষণহীন যান হিসেবে ট্রাম বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে, আধুনিক করা হচ্ছে।
সেখানে কলকাতায় ট্রাম ধ্বংস করা হচ্ছে। ট্রাম ডিপোয় তৈরি হচ্ছে কাফেটেরিয়া। সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদারের কথায়, ‘ট্রাম ডিপোর মূল্যবান জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’