প্রতারণায় রাশি রাশি টাকা। ফলে বিপুল রোজগারের নেশায় কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির মতো সংস্থার চাকরিও ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেননি পীযূষকান্তি ঘোড়ুই। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র ভর্তির প্রতারণার অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের পীষূষকান্তিকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে বর্ধমান জেলা পুলিশ।
তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও তিন জন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে মেডিক্যালে ছাত্র ভর্তির প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ধৃতেরা প্রত্যেকেই কলকাতা সমেত রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির প্রতারণা চক্রের জাল বিছিয়েছিল। পরে সেই জাল ছড়ায় ভিন রাজ্যেও।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র ভর্তিতে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ অভিযুক্ত ৪ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। জেরার পরে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নরেন্দ্রপুরের তেঁতুলবেড়িয়ার বাসিন্দা পীযূষকান্তি স্রেফ প্রতারণায় মোটা লাভের কারণে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন।
চাকরি করাকালীন এক বন্ধুর পরামর্শে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র ভর্তির নামে প্রতারণার ব্যবসায় নামেন তিনি। পরে সেই ব্যবসায় এত লাভ হতে থাকে যে, চাকরিই ছেড়ে দেন। এর পর রমরমিয়ে চলতে থাকে ব্যবসা। করোনার সময়ে অসুস্থ বাবা বাসুদেব গড়াইকে চিকিসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আনেন পীযূষ।
সেখানে ফের সেই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এর পর বন্ধুর পরামর্শ মতো বিহারের কিষানগঞ্জ সমেত অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতে একই ভাবে প্রতারণার কাজ শুরু করেন পীযূষকান্তি। মূলত নিটের রেজাল্ট বার হওয়ার পর থেকেই এই চক্রটির রমরমা বাড়তে থাকে।
সূত্রের খবর, চক্রটিতে জড়িতরা বিলাসবহুল জীবনেই অভ্যস্ত ছিল। ভর্তির টাকা দিতে আসা লোকেদের মনে যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, তার জন্য কেতাদুরস্ত থাকতেই পছন্দ করত প্রতারকরা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘এদের কথাবার্তা, আদবকায়দা দেখে একবারের জন্যও প্রতারক বলে কেউ ভাবতে পারবে না।
কলকাতা, বর্ধমানের বিভিন্ন নামী হোটেলে এরা উঠত। সেখানে চা-কফি খেতে খেতে ডিল সারত। ওই সব জায়গায় এক কাপ চায়ের দামই দুই থেকে আড়াইশো টাকা। এরা যে সব গাড়িতে যাতায়াত করত বিত্তবান ছাড়া সেগুলি ব্যবহার করেন না কেউ।’ পুলিশ জানতে পেরেছে, পীযূষকান্তিই মূলত ডাক্তার সেজে প্রতারণার নিখুঁত অভিনয়ের কাজটি করতেন।
২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই অপারেশন সেরে ফেলতেন তিনি। প্রতি ক্ষেত্রেই অরিজিনাল ডকুমেন্ট নিয়ে রাখত প্রতারকরা। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের এক শ্রেণির ক্লার্ক, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ ছিল। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘এটা একটা বিশাল র্যাকেট। পুলিশি তদন্তে বহু তথ্য উঠে এসেছে। আদালতে সেগুলি জানিয়ে প্রয়োজনে ধৃতদের ফের হেফাজতে নিতে পারি আমরা।’