রাজ্যের প্রথম সারির একটি সংশোধনাগারের সুপার হিসেবে তাঁর কাজ কারাবিভাগকেই কলুষিত করেছে বলে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ রায়েও উল্লেখ করেছে। ওই সুপারের কাজের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিচারপতি বাগচী মৌখিক পর্যবেক্ষণে সিনেমার কথাও টেনে আনেন।
আদালতের বক্তব্য, অভিনেতা-পরিচালক ভি শান্তারামের ১৯৫৭ সালের ‘দো আঁখে বারা হাত’ সিনেমার জেলকেই মডেল ধরে দেশে মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি হয়। সেখানে যে জেলারকে দেখানো হয়েছিল, বন্দিদের সঙ্গে তাঁর আচার-ব্যবহারকেই মডেল ধরা হয়েছিল। অথচ এখানে তার ঠিক উল্টো আচরণ প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের। আদালতের বক্তব্য, দেশের আইনসভা অনেক ভেবেচিন্তে জেলের নাম বদলে সংশোধনাগার করেছিল।
আইনপ্রণেতারা মনে করেছিলেন, বন্দিদের আচরণ বদল করতে হবে সংশোধনাগারেই। কিন্তু যে জেলের সুপার নিজেই বেআইনি কাজ করছেন, তিনি কী করে বন্দিদের ঠিক পথে আনবেন! আদালতের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে কারা-ব্যবস্থায় অনেক অস্বচ্ছতার কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু সেই অস্বচ্ছতা যদি বিচারবিভাগের নির্দেশকেও লঙ্ঘনের উপক্রম করে, তখন আর আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
ওই সুপারের আচরণ কোর্ট মেনে নিলে ভবিষ্যতে জেলে বন্দিরা হাঙ্গামা করলে তাদেরই বা দোষী বলা যাবে কী করে–সে প্রশ্নও তুলেছে বিচারপতি বাগচীর বেঞ্চ। বিচারপতিদের মন্তব্য, ‘যদি আমাদেরই সুপারকে ঠিক পথে আনতে হয়, তা হলে বন্দিদের ঠিক পথ দেখাবেন কে?’ আদালতের বক্তব্য, বিকাশ মিশ্র নামকরা ব্যবসায়ী।
তাই হাইকোর্টের নির্দেশের থেকেও সুপারের কাছে তিনিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছেন। ফলে একজন বিচারাধীন বন্দিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সব দেখেও কোর্ট চোখ বন্ধ করলে জেলের অনুশাসন রক্ষাই অসম্ভব হয়ে উঠবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, কয়লা পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে ইচ্ছে করেই হাসপাতালে পাঠিয়ে তদন্ত প্রভাবিত করতে চেয়েছেন সুপার। বার বার বিকাশকে হাসপাতালে পাঠানো আসলে জেল সুপারের ‘দুঃসাহসী’ পদক্ষেপ। জেল সুপার ইচ্ছে করেই আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন।
কেননা, মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি, চিকিৎসকের সুপারিশ ছাড়া বিকাশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার মামলায় এ দিন ওই জেল সুপারকে এজলাসে তলব করা হয়েছিল। তাঁর তরফে আইনজীবী যে-সব যুক্তি দেন, তার কোনওটাই মান্যতা পায়নি আদালতে।
আদালতের বক্তব্য, জেল সুপারের আচরণ ইচ্ছাকৃত। একজন সরকারি কর্মচারী জুডিশিয়াল নির্দেশ অমান্য করলে সেটা অত্যন্ত খারাপ। একই সঙ্গে ওই সুপার যে সবার প্রতি সমভাবাপন্ন নন, তা-ও স্পষ্ট।