রবিবার হাতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত ডিভিশনের অফিসে। সেখানে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (সমগ্র বনবল শীর্ষ) সৌমিত্র দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, অবাধ্য আচরণ করা ১০টি হাতিকে বন্দি করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে লোকালয়ে তাণ্ডব চালানো এমনই ৩টি হাতিকে পাকড়াও করা হয়েছে।
পরিস্থিত বুঝে আগামী দিনে বাকিগুলিকেও ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিন সৌমিত্র দাশগুপ্ত দক্ষিণবঙ্গের বনকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাঝে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি যে, লোনার (দলছুট) হাতির সঙ্গেই মানুষের সংঘাত হয় বেশি। তাদের মাধ্যমেই মানুষের মৃত্যু ঘটে, ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আগে ভয় পেতাম যে, হাতি ধরতে পারব না। ভারত সরকার অনুমতি দিত না। কিন্তু এখন আমরা কেন্দ্রের কাছ থেকে ১০টি হাতি ধরার অনুমতি নিয়েছি। গত দু-তিন মাসের মধ্যে ৩টি হাতিকে ধরেও ফেলেছি। তার মধ্যে দলছুট দু’টিকে এখান থেকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
আগামী দিনে পরিস্থিতি তেমন হলে বাকি ৭টিকেও ধরা হবে।’ মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোই মূল লক্ষ্য জানিয়ে রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তা বলেন, ‘গত ২৫-৩০ বছর ধরে আমরা জানি যে, ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের মৃত্যু সাধারণত দলছুট হাতির মাধ্যমেই হয়। তাই আমাদের বন দপ্তরের পরিকল্পনা লোনারদের জন্য একরকম আর দলে থাকা হাতিদের জন্য অন্যরকম হয়।’
অতি সম্প্রতি মেদিনীপুর থেকে একটি হাতি চলে আসে আরামবাগে। সেখানে হাতির হানায় মারা যান এক জন। তার আগে বাঁকুড়ায় চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে হুলাপার্টির এক সদস্য সহ দাঁতালের হামলায় প্রাণ হারান ৪ জন। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঝাড়গ্রামেও।
এসবের মধ্যেই উত্তরবঙ্গের গজলডোবায় একেবারে হাতির মুখে পড়ে মৃত্যু হয় এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। এর পরেই মাধ্যমিক চলাকালীন জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাতি তাড়ানোর যাবতীয় উদ্যোগ সেরে ফেলতে হবে সকাল ৮টার মধ্যে যাতে, পরীক্ষায় কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। সেই সঙ্গে হাতিকে বাগে আনার কৌশল ঠিক করতে উঠে পড়ে লাগে বন দপ্তর।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল, মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) অশোক প্রতাপ সিং, মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব চক্র) মানসরঞ্জন ভট্ট, মুখ্য বনপাল (কলকাতা সদর) শুভঙ্কর সেনগুপ্ত, অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ, কলকাতা সদর) রাজেশ কুমার।
বন দপ্তর সুত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০টি হাতি। তার মধ্যে বাঁকুড়াতেই রয়েছে ৭১টি। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এক ডিভিশনের সঙ্গে অন্য ডিভিশনের সমন্বয় বজায় রেখে হস্তিকুলকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিস্তারিত আলোচনা হয় এদিনের বৈঠকে।
পাশাপাশি সামনের মাসের গোড়ার দিকে দক্ষিণবঙ্গ থেকে হাতিদের ঝাড়খণ্ডের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও একটি রূপরেখা তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রধান মুখ্য বনপাল (সমগ্র বনবল শীর্ষ) বলেন, ‘এবার অনেক বেশি পেশাদারিত্ব নিয়ে হাতি তাড়ানোর কৌশল নিচ্ছি আমরা। গড়িমসির কোনও জায়গা নেই।’