পরে বিকেলে সব মেডিক্যাল কলেজের কর্তা ও শিশুরোগ বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয় স্বাস্থ্যভবনে। ঠিক হয়, জেলা থেকে অন্যায্য রেফার থামাতে হবে এবং জেলাস্তরের হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের শিশুরোগীর চিকিৎসায় ন্যূনতম দেরি বরদাস্ত করা হবে না। স্বাস্থ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে খোলা হবে ৫০ শয্যার শিশু-বিভাগ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক স্কুলেই সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ দিন থেকে। স্কুল পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়লে আইসোলেশন এবং মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ স্বাস্থ্য দপ্তর অবশ্য দিয়েছিল গত সপ্তাহেই। কিন্তু সর্বসাধারণের মাস্ক ব্যবহারে এখনও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
তবে স্কুলগুলি সতর্ক। সোমবার সাউথ পয়েন্ট, ক্যালকাটা গার্লস, ভারতীয় বিদ্যাভবনের মতো স্কুলে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হয়। ভারতীয় বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ অরুণ দাশগুপ্ত জানান, কিছু পড়ুয়া মাস্ক ছাড়াই স্কুলে চলে এসেছিল।
তাদের স্কুলই মাস্ক দিয়েছে। রামমোহন মিশন স্কুলের তরফে পুরসভা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের সচেতন করা হয়।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখা, পার্ক ইনস্টিটিউশনের মতো স্কুলে কয়েক জন পড়ুয়া জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে আসে। তাদের আলাদা ঘরে বসিয়ে অভিভাবকদের ডেকে বাড়ি পাঠানো হয়। বলা হয়েছে, একেবারে সুস্থ হয়ে স্কুলে আসতে। স্কুলগুলির বক্তব্য, এই পর্বে স্কুলের পড়াশোনায় কোনও ঘাটতি হলে তা পরে মিটিয়ে দেওয়া হবে।
মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে এবং যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আমরা প্রার্থনার লাইনেই সবাইকে ফের এক বার পুরেনো করোনা বিধিগুলি মনে করিয়ে দিয়েছি। আমরা বলেছি, যদি সুস্থ থাকো, তা হলেই স্কুলে এসো। আবার কয়েক দিন আমাদের নিয়ম মেনে চলতে হবে।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে নয়, মূলত তাঁরা চিন্তিত দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের নিয়েই। কেননা, অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার নজির মূলত তাদের মধ্যেই। গত দু’দিনে মৃত পাঁচ জনের বয়সও দু’ছরের কমই।
সোমবার ভোরে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়। তার কিছু পরেই কলকাতা মেডিক্যালে মারা যায় ৯ মাসের এক শিশুকন্যা। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল গত ২০ ফেব্রুয়ারি।
তার গত ২০ দিন ধরেই জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট ছিল। কিন্তু অবস্থার এতটাই অবনতি হয়ে যায় জেলাতেই যে কলকাতায় এনে এক সপ্তাহের চিকিৎসাতেও লাভ হয়নি।
স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে এই মৃত্যুটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের পৌরোহিত্যে বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যও। বৈঠকে উপলব্ধি, অনেক ক্ষেত্রেই জেলাস্তরের হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীর চিকিৎসা দেরি করে শুরু হচ্ছে। যখন যে রোগীকে অক্সিজেন কিংবা ভেন্টিলেশন দেওয়ার কথা, হয় তা দেওয়াই হচ্ছে না অথবা যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে না।
ফলে অবস্থার ঘোর অবনতির পর রেফার হয়ে কলকাতার বড় হাসপাতালে এসেও লাভ হচ্ছে না। এড়ানো যাচ্ছে না প্রাণহানি। তাই সব হাসপাতালকে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর-সহ পরিকাঠামো এবং লোকবলের সময়োচিত সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যভবনের তরফে। বলা হয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে, বিশেষত শিশুদের বিভাগে, যেন অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ভেন্টিলেশনের রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ ভাবে হয়।
কলকাতার হাসপাতালে রেফার করতে জেলাস্তরের হাসপাতাল কর্তাদের এক প্রকার নিষেধই করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা, এতে কলকাতার বড় হাসপাতালে বেডের আকাল ঘুচবে এবং সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাধীন শিশুরা উন্নততর চিকিৎসা পাবে।