বি.টেক অশ্বিনী
মেকানিক্যাল ডিগ্রি অর্জনের পর ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি বাইক তৈরীর কারখানায় সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজে যোগ দেয় অশ্বিনী কুমার । তারপরই সারা বিশ্ব কাঁপিয়ে আসে করোনা নামে ভাইরাস ২০১৯-২০ সালে। মহামারীর কারণে সারা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষে ও দীর্ঘ লকডাউন দেখে দেশবাসী। হাজার হাজার মানুষ রুজি রুটি হারায়। লকডাউনের শুরুতেই কোনওক্রমে বেঙ্গালুরু থেকে ঘরে ফিরে আসে খনি অঞ্চলের ছেলে অশ্বিনী। ভালো পারিশ্রমিকের চাকরি চলে যাওয়ার পরেও দমেনি যুবক অশ্বিনী। একদম আলাদা রকম কিছু করে দেখানোর জেদ পেয়ে বসে তাকে।
অশ্বিনী কুমার জানায়, ঠিক সেই সময় মাথায় আসে একটু অন্যরকম ভাবে ব্যবসা করার। যা হবে অন্যদের থেকে একটু হলেও আলাদা। আর তাই শুরু করেন চায়ের দোকান। তবে গতে বাঁধা চায়ের দোকান নয়, চায়ের প্রায় ৭ থেকে ৮ রকম ভ্যারাইটি নিয়ে শুরু হয় তার পথ চলা । যদিও তার এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করেছে তার পরিবার তার মা বাবা বলে জানাই অশ্বিনী। আর তাই দু’নম্বর জাতীয় সড়ক অণ্ডাল থানার অদূরে শুরু করেন বি.টেক চাওয়ালা নামক চায়ের দোকান।
অশ্বিনী জানায়, সব হারানোর পর প্রস্তুতি ছিল তার মাথাতে যে এর বিভিন্নতা নিয়ে দোকান খুলবে তাই শুরু হয় বাড়িতেই চা তৈরীর প্রশিক্ষণ। বাড়িতে বসেই নিজের হাতে নানান ধরনের চা তৈরি করে বাড়ির লোকেদের খাওয়ায় প্রথমে। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারি জাতীয় সড়কের ধারে শুরু হয় তার চা তৈরি পথচলা। দু মাসেই অতি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে বি.টেক চায়ওয়ালা। জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে চা খেয়ে যাচ্ছে তার হাতে। ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে চায়ের দাম । এর মধ্যে চকলেট চা, এলাচি চা, বাটার চা ও কেশর চা অতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে খনি এলাকায়। তবে বি.টেক চাওয়ালা যুবকের হাতে সাধারণ চা খেয়েও পাওয়া যায় চরম তৃপ্তি।
কেন বি.টেক ডিগ্রি থাকতে এতো ভালো চাকরির সুযোগ থাকলেও চায়ের দোকান?
প্রশ্নের উত্তরে অবলীলায় সাহসী নিজের প্রতি অদম্য বিশ্বাসী অশ্বিনী জানাই, লকডাউনে চাকরি যায়,লকডাউন হওয়ার পর কিছুদিন ওয়ার্ক টু হোম ছিল, তবে তাতে ছিল না কোন মজা । তাই মাথায় আসে অন্য কিছু করার । বাড়ির বড় ছেলে অশ্বিনী তার বাবাকে তার ব্যবসা করার কথা বলে, প্রথমে ইতস্তত করলেও ছেলের নিজের প্রতি বিশ্বাস বাবার মন কাড়ে। সব রকম ভাবে সাহায্য করে তার বাবা আর তাই আজকের বি.টেক চায়ওয়ালার সুন্দর এই দোকান।
লকডাউনে চাকরি গেলেও শিক্ষিত যুবক অশ্বিনী সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব না দেখিয়ে বলেন, এটা সত্যিই যে লকডাউনে বহু মানুষ রুজি রুটি হারিয়েছে তবে সরকার তোর সকলকে চাকরি দিতে পারে না তাই নিজেদের উচিত নিজের মতো করে বাঁচা । সৎ পথে সঠিক উপায় নিজের ইচ্ছাশক্তি ও কর্ম ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বর্তমানে অণ্ডালের বি.টেক চা ওয়ালা পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে। দু মাসেই প্রসিদ্ধ অশ্বিনী চায়ের পাশাপাশি খুলেছে সুন্দর সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট। সে চাই জীবনে আরও বড় হতে আগামী দিনে তার প্রতি শুভেচ্ছা রইল আমাদেরও।