কথায় আছে মর্নিং শোজ দ্য ডেজ। এদিন সকালে ভোটবাক্স খুলতেই জোড়াফুলের সম্ভাবনার আকাশে জমা হয়েছিল আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ। পোস্টার ব্যালেট থেকে এগিয়ে যাওয়া কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসকে আর টেক্কা দেওয়া সম্ভব হয়নি তৃণমূলের। যত সময় এগিয়েছে, একটার পর একটা গণনার রাউন্ড পেরিয়েছে, ততই বেড়েছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে বাইরন বিশ্বাসের।
এই জয়ের মুখ বাইরনের হলেও সাগরদিঘি আসলে ছিল অধীরের প্রেস্টিজ ফাইট। এই জয়ের নেপথ্যে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিই। সাগরদিঘির উপনির্বাচন থেকে জয় ছিনিয়ে বিধানসভায় ঢোকার টিকিট পেলেন বাইরন। কার্যত ২০২১ এর বিধানসভার শূন্য থেকে খাতা খুলল কংগ্রেস প্রার্থী। এই জয় স্বচ্ছ নির্বাচন, কেন্দ্র বাহিনীর নিরপেক্ষ ভুমিকা, বামেদের সমর্থন আর সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনকে ক্রেডিট দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২২ হাজার ৯৮০ ভোটে পরাজিত করেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। ১৬ রাউন্ড গণনা শেষে বাইরন বিশ্বাস পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৬১১। দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৬৩১। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
দিনের শুরুতেই জয়ের ইঙ্গিত মিলেছিল। পোস্টাল ব্যালট ভোটে মাত্র এক ভোটে এগিয়ে বাইরন বিশ্বাস উত্তেজনার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দিন শুরু করেন। তারপর থেকে তৃতীয় রাউন্ড ছাড়া লাফিয়ে লাফিয়ে বাইরন বিশ্বাস ভোটের ব্যবধানে নিকটতম তৃণমূল প্রার্থীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন। কেবলমাত্র তৃতীয় রাউন্ডে মনিগ্রাম অঞ্চলে তৃণমূল প্রার্থী লিড পেয়েছেন। গণনা যত এগিয়েছে জয়ের হাসি চওড়া হয়েছে বাইরণ বিশ্বাসের মুখে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের মুখ ততই শুকিয়ে গিয়েছে। এক করে গণনা কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারা।
অন্যদিকে সমর্থকদের জয়ের উচ্ছ্বাস গণনা শেষের আগেই অধীর চৌধুরীকে টেনে ঘর থেকে বার করেছে। গণনার দিন কার্যত বহরমপুরে জেলা কার্যালয়ে বসেই মনিটারিং করেন অধীর চৌধুরী। এদিন জেলা কার্যালয় থেকে বেড়িয়ে সরাসরি সাগরদিঘিতে পা রাখেন অধীর।
সাংবাদিকদের সামনে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ”তোমাকে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে। এই জয় সাধারণ মানুষের জয়। বাম কংগ্রেসের সমর্থিত প্রার্থীকে সাধারণ মানুষ দু’হাত ভরে আর্শীবাদ করেছেন।”
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সুব্রত সাহা ৯৫, ১৮৯ ভোট পেয়ে ৫১, ১০৬ ভোটে জিতেছিলেন। ভোট পেয়েছিলেন ৫০.৯৫ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুন ভোট পেয়েছিলেন ৪৪৯৮৩ ভোট। ভোটের শতাংশে ২৪.০৮ শতাংশ। কংগ্রেসের জোট প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৬৩৪১ ভোট। এবার ৫১ হাজারের বেশি ভোটের মার্জিন টপকে ২২৯৮০ ব্যবধানে জয় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের কাছে অশনি সংকেত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। একইসঙ্গে উপনির্বাচনে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ভুমিকা নিয়ে এখন থেকেই তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।