রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে সঙ্কট ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। ওএমআর বিকৃতির দায়ে আদালত গ্রুপ-ডি পদে ২৮২৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেও স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) খুঁজে পেয়েছিল কর্মরত ১৯১১ জনকে। তাঁদের নিয়োগ-সুপারিশ প্রত্যাহার করে কমিশন নতুন সম্ভাব্য নিয়োগে ১৪৪৪ জনের তালিকা প্রকাশ করে। তার মধ্যে থেকে বৃহস্পতিবার পূর্বাঞ্চলের (হুগলি, দুই বর্ধমান, বীরভূম) ৪০ জনকে শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশপত্র দেওয়ার জন্যে কাউন্সেলিংয়ে ডেকেছিল SSC।
কিন্তু তাতে হাজিরই হননি অর্ধেক চাকরিপ্রার্থী! তাতে যুগপৎ বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন কমিশনের কর্তারাও। যদিও শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্ট ১৯১১ জনের শূন্যপদে নতুন নিয়োগের কাউন্সেলিং আপাতত স্থগিত করেছে। শিক্ষামহলের একাংশের প্রশ্ন, সর্বোচ্চ আদালত গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ-কাউন্সেলিংয়ে পরবর্তী শুনানিতে যদি স্থগিতাদেশ তুলেও নেয়, ১৯১১ শূন্যপদে কাউন্সেলিংয়ে ডাকার জন্যে এত প্রার্থী মিলবে তো!
সূত্রের খবর, গ্রুপ-ডি পদে কাউন্সেলিংয়ে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ না দিলে সোমবারই আরও ১৫০ জনকে ডাকার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। কিন্তু প্রথম দফায় ৪০ জনের মধ্যে মাত্র ২১ জন কাউন্সেলিংয়ে হাজির হয়েছিলেন। অনুপস্থিত ১৯ জনের মধ্যে মাত্র একজন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি ইতিমধ্যে রেলে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু বাকি ১৮ জন গেলেন কোথায়?
অথচ ধর্মতলায় শহিদ মিনার, গান্ধীমূর্তি এবং মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে নানা স্তরের ওয়েটিং লিস্টে থাকা হবু শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ১২টি সংগঠনের কোনও কোনওটির অবস্থান-ধর্না দু’বছর ছুঁই-ছুঁই। খোদ কমিশনের আধিকারিকরাও সেই নজির টেনে বলছেন, চাকরিপ্রার্থীরা তা হলে কাউন্সেলিংয়ে গরহাজির কেন?
SSC-র গ্রুপ সি-ডি ওয়েটিং চাকরিপ্রার্থী মঞ্চর সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসের বক্তব্য, “আমাদের অবস্থান-ধর্না রবিবার ২৭৫ দিনে পড়বে। আমরা কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে গ্রুপ-ডি’র শূন্যপদের সমসংখ্যক প্রার্থীকে এক লপ্তে কাউন্সেলিংয়ে ডাকার আর্জি জানিয়েছিলাম। তবে উনি বলেছেন, আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে।”
যদিও বিকাশ ভবনের কর্তারা মনে করাচ্ছেন, এর আগেও উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় টেটে সফল পাঁচ হাজার প্রার্থী ২০১৯ সালে ভেরিফিকেশনে হাজির হননি। ২০১৮ ও ‘১৯ সালে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতেও প্রথম দফার নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় ১২০০-র বেশি প্রার্থী সফল হয়েও অনুপস্থিত ছিলেন। এঁদের অধিকাংশই লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ শেষে চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠলেও কাউন্সেলিংয়ে আসেননি।
নবম ও দশমের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১০৮৬। ফের গ্রুপ-ডি পদে কাউন্সেলিংয়ে চাকরিপ্রার্থীদের গরহাজিরায় SSC-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি বিস্মিত।’ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চর সুশান্ত ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, “ধর্মতলায় আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক প্রার্থীই একই সঙ্গে উচ্চপ্রাথমিক, প্রাথমিক, রাজ্য সরকারি গ্রুপ-ডি, পিএসসি ক্লার্কশিপ, গ্রুপ সি-ডি, ICDS এবং ফুড সাপ্লাইয়ের SI পদের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। অনিয়মিত পরীক্ষা ও নিয়োগের ফলে যে যেখানে যখন ডাক পাচ্ছেন, ঢুকে পড়ছেন।”