বাগুইআটির বাসিন্দা, সল্টলেকের একটি স্কুলের পড়ুয়া সুদেষ্ণা বসুর জ্বর আসে ১৯ জানুয়ারি সন্ধেয়। পরদিন শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তার পরের দিন এক্স-রে করে দেখা যায়, তার ফুসফুসে প্রবল সংক্রমণ। ২১ তারিখ সুদেষ্ণাকে ভর্তি করা হয় বাগুইআটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে গত ২৬ জানুয়ারি বাইপাস লাগোয়া মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। সেই থেকেই ফুসফুসের কাজকর্ম সচল রাখতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল একমো মেশিনের সাহায্য নেওয়া শুরু।
সুদেষ্ণার মা দেবাঞ্জনা বলেন, ‘বুঝতেই পারছি না, কোথা থেকে কী হয়ে গেল!’ তিনি জানান, হাসপাতাল জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার বিল হয়েছে। সুদেষ্ণার বাবা সুকান্ত একটি বিমা সংস্থার এজেন্ট। কোনওমতে ১৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছেন। এখনও বাকি প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। তা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে পরিবারের। ঘটনাচক্রে যে দিন সন্ধ্যায় সুদেষ্ণার প্রথম জ্বর আসে, সে দিন সকালেই স্কুলে হাম-রুবেলার টিকা নিয়েছিল সে। চিকিৎসকরা অবশ্য এ জন্য কোনও বিপত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন।
কিশোরীর বাবা সুকান্ত জানান, টিকা নেওয়ার পরেই মেয়ের জ্বর আসায় তাঁদের মনটা খুঁতখুঁত করছে। তবে হাম-রুবেলার সংক্রমণ ঠেকাতে যে ওই টিকা নেওয়া জরুরি ছিল, সে কথাও একবাক্যে স্বীকার করেন তিনি। সুদেষ্ণা অবশ্য একা নয়। তার ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া বোনও ১৯ তারিখ টিকা নেওয়ার পর সন্ধ্যায় জ্বর আসে। পরে জানা যায়, সে-ও অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রামিত। সে অবশ্য দিদির মতো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েনি। এখন স্কুলেও যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে অবগত স্বাস্থ্য দপ্তর। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘টিকা-পরবর্তী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত স্বাস্থ্য দপ্তরের যে টিম আছে, তারা এই ঘটনা নিয়ে খোঁজখবর করবে।’ চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, হাম-রুবেলা টিকা নেওয়ার পর জ্বর আসা এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়াটা কাকতালীয়। দুই বোনই আসলে অ্যাডিনোয় সংক্রামিত হয়েছিল টিকা নেওয়ার আগে। শরীরে সেই সংক্রমণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে টিকা নেওয়ার পরে। সেটাই সুকান্তদের ‘খুঁতখুঁতানি’র কারণ।
যে বেসরকারি হাসপাতালে আপাতত চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী, সেখানকার চিকিৎসক দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘টিকার সঙ্গে সুদেষ্ণার অসুস্থতার কোনও সম্পর্ক নেই। ভর্তি হওয়ার পর ওর নিউমোনিয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা অ্যাডিনোভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছি।’ তিনি জানাচ্ছেন, আশার কথা হলো, একমো এবং আনুষঙ্গিক চিকিৎসায় দারুণ ভালো সাড়া দিচ্ছে সুদেষ্ণা।
সজ্ঞানে রয়েছে সে। রাইলস টিউবে খাবারও খাচ্ছে। অন্যের সঙ্গে ইশারায় তার মনের ভাব আদান-প্রদান করতে পারছে। তবে এখনও ২০% একমো-নির্ভরতা রয়েছে তার। চিকিৎসকদের আশা, কিছু দিনের মধ্যেই একমো থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে সুদেষ্ণা।