আগের নাম গোপাল দলপতি বদলে আরমান গাঙ্গুলি হয়েছিলেন তিনি। এই নাম পরিবর্তনের আগে ও পরের সব নথি খতিয়ে দেখে তাঁর সঙ্গে ‘প্রাক্তন’ স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের আর্থিক লেনদেনের অনেক তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। যা থেকে জানা গিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৮-র আগে পর্যন্ত সময়ে দু’জনের মধ্যে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়েছে। সেই টাকার উৎসের ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় গোপালের নামে জমির সন্ধান মিলছে। তিনি সেগুলি কী ভাবে কিনেছিলেন? চিটফান্ডের টাকায়, না চাকরির টোপ দিয়ে? জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। গোপাল ও হৈমন্তীর অ্যাকাউন্টে লেনদেন হওয়া টাকার সঙ্গে ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার কোনও যোগ আছে, নাকি হৈমন্তীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
২০১৮-র পরে দু’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে অবশ্য মোটা টাকার লেনদেন তেমন একটা হয়নি বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে ‘ভাড়া’ করা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গোপাল আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গোপাল নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিলে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও নিশ্চিত হতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১২-র পর থেকেই ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা খোলার পরিকল্পনা চালাচ্ছিলেন গোপাল। দু’-তিন বছরের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে একটি সংস্থা খুলেও ফেলেন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওডিশায় ব্যবসা করত ওই সংস্থা। অন্যান্য চিটফান্ড কর্তার মতোই বাজার থেকে টাকা তুলতেন গোপাল। ২০১৮-র আগে পর্যন্ত তিনবার গ্রেপ্তার হন তিনি। দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ঠাঁই হয় তিহার জেলে।
হৈমন্তী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, গোপালের সঙ্গে এখন তাঁর যোগাযোগ নেই। কোনও বেআইনি আর্থিক লেনদেনে তিনি যুক্তও নন। সিবিআই সূত্রে খবর, গোপালকে জিজ্ঞাসাবাদের তোড়জোড় শুরু হলেও এখনই হৈমন্তীকে প্রশ্ন করার প্রস্তুতি তাদের নেই। গোপালের বয়ান খতিয়ে দেখে এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে পারেন গোয়েন্দারা।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সামনে এসেছেন আরও এক ‘রহস্যময়ী’, সোমা চক্রবর্তী। তাঁকে একদফা জেরা করেছে ইডি। সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের সোমা জানিয়েছেন, ঋণ হিসেবে তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন ধৃত কুন্তল ঘোষ। কিন্তু কেন এত টাকা ঋণ দিলেন কুন্তল? সে প্রশ্নের সদুত্তর এখনও মেলেনি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কুন্তলের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ছ’কোটি টাকার হদিশ মেলে।
ইডি-র দাবি, সেই টাকা এসেছিল নিয়োগ দুর্নীতির কারবার থেকে। পরে ওই টাকা নানা জনকে পাঠিয়েছিলেন কুন্তল। তাঁদেরই একজন হলেন। দক্ষিণ কলকাতা ছাড়াও সল্টলেক-নিউ টাউনে পার্লারের সঙ্গে যুক্ত তিনি। জানা গিয়েছে, সোমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কুন্তলের টাকা ঢোকার পর তা অন্যত্র চলে যায়। ঋণ হিসেবে টাকা নিলে, কেন সেটা তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।