অদ্ভুত সংস্কার! দোল উৎসবের মরসুমে শ্রীচৈতন্যদেবের মামার বাড়ির গ্রাম নদিয়ার বেলপুকুরে গেলেই সেখানকার মাটিতে দাঁড়িয়ে খেতে হবে বেল। দোলের ঠিক আগে চৈতন্য স্মৃতি বিজড়িত এই ভূমি এখন পরিক্রমা করছেন দেশ বিদেশের হাজার হাজার কৃষ্ণ ভক্ত। তাঁদের জন্য গোপাল মন্দির লাগোয়া মাঠে বিক্রিও হচ্ছে দেদার বেল। আর রোজ রোজ বেল ভেঙে খাওয়াও চলছে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়।
চৈতন্যদেবের দাদু নীলাম্বর চক্রবর্তী এবং তাঁদের পূর্বপুরুষের পূজিত মদনগোপাল জিউয়ের বিগ্রহ এ গ্রামে এখনও রয়েছে। এমনকী, চৈতন্যর মা শচীমাতার বাপেরবাড়ির মূল অংশ কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও সেই জমিতে কয়েক বছর আগে ছোট্ট একটি চালা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। নিমাইয়ের মামা বাড়ি বলেই দাবি করা হয় সেই চালা বাড়িকে।
জানা গিয়েছে, শুধু মায়াপুর ইসকন (Mayapur ISKCON) থেকেই ৭ দিনের পরিক্রমায় বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে প্রায় পনেরো হাজার ভক্ত গ্রামে এসেছেন। নবদ্বীপ মায়াপুরের অন্য মঠ মন্দির থেকেও অনেকে আসছেন এই গ্রামে। স্থানীয় মদনগোপাল বিগ্রহের পুজো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গ্রাম কমিটির এক কর্তা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দোল উৎসবের মরশুমে বেলপুকুরে এসে বেল খাওয়া ভক্তদের একটা বিশ্বাস। ঠাকুরকেও বেল নিবেদন করার রীতি দীর্ঘদিন ধরে মানা হয় এখানে। ফলে বস্তা বস্তা বেল নিয়ে বহু মানুষ তা বিক্রি করতে বসে পড়েন মন্দিরের সামনের মাঠে।”
স্থানীয় বাসিন্দা পীতম ভট্টাচার্য বলেন, “অন্য অনেক গ্রামে শহুরে হাওয়া হু হু করে ঢুকে গেলেও আমাদের গ্রাম অনেকটাই তার নিজস্ব পরিচয় ধরে রাখতে পেরেছে। এখনও গাছগাছালি, পুকুর ঘেরা সেই শান্ত পরিবেশ রয়েছে এখানে। ধুবুলিয়া বটতলা থেকে বেলপুকুর যাওয়ার বাস স্টপ গুলোর নামও নিমতলা, অশ্বত্থতলা, বকুলতলা রাখা হয়েছে। প্রচুর বেলগাছও আছে গ্রামে। মাঘ ফাল্গুনে বৈষ্ণব ভক্ত যাঁরা, এখানকার মন্দির দর্শনে এসে অনেকেই বেল খান, এটা তো দেখতেই পাই আমরা।”
মদনগোপালের বিগ্রহটি যে শচীমাতার বাপের বাড়ির পূজিত আদি বিগ্রহ, তা সঠিক বলেই মনে করেন পণ্ডিত ও পুরাতত্ব সমাজের লোকজন। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “শচীমাতার বাপের বাড়ির এই বিগ্রহই বংশ পরম্পরায় পূজিত হতে হতে এখন গ্রাম কমিটির হাতে।”