আজ থেকে আনুমানিক ৫৩০ বছর আগে নীলাচলে জগন্নাথ দর্শন করে নদী পথে ফেরার সময় এই পিছলদহ গ্রামে রূপনারায়ণ নদীর তীরে তাঁর নৌকা নোঙর করেন মহাপ্রভু। তাঁর স্মৃতিতেই আজও এই গ্রামে মহা সমারোহে পালিত হয় পাঁচদিন ব্যাপী দোল উৎসব। কথিত আছে, এই গ্রামে নদীর তীরে একটি তমাল গাছের নীচে তিনি ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম করেন।
বিশ্রাম শেষে তাঁর অনুগামী শিষ্য উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির রাঘব পন্ডিতের বাড়িতে মহোৎসবে অংশ নেওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেন মহাপ্রভু। যেটা শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে মধ্য লীলায় ষোড়শ পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে। গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তিদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই পিছলদহ গ্রামকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।
শ্রীমৎ যোগেশ ব্রম্ভচারী মহারাজ এই গ্রামের সন্ধান পান। পরবর্তী সময়ে যোগেশ ব্রম্ভচারী মহারাজের শিষ্য মুরারী ব্রম্ভচারী মহারাজ গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় একটি মন্দির তৈরি করেন। আর প্রতি বছর দোলের সময় এই মন্দির চত্বর ভক্তদের ভীড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে।
পিছলদহ মহাপ্রভু আশ্রম ট্রাস্টের সহ সম্পাদক অভয় কুমার মণ্ডল জানান, সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলেও দোলের অনুষ্ঠানটি বড় হয়। ৫ দিন ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত মহাপ্রভুর পদধূলি ধন্য এই গ্রামে আসে। হরিনামে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। নগর সংকীর্তন থেকে অন্ন ভোগ,পুজো পাঠ থেকে একে অপরকে রঙে রাঙিয়ে তোলা সবকিছুকে কেন্দ্র করে ঐশ্বরীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয় এই গ্রামে।
গ্রামের বাসিন্দা রমা প্রসাদ বারিক জানান, আজও গ্রামে মহাপ্রভুর সেইসব নিদর্শন বিরাজমান। মহাপ্রভু যে তমাল গাছের নিচে বিশ্রাম করেছিলেন সেই পুণ্য গাছকে গ্রামের মানুষ এখনও বুক দিয়ে আগলে রেখেছে। এমনকি মহাপ্রভুর পায়ের চিহ্ন সযত্ন রাখা আছে। তিনি বলেন, “এটা শুধু আমাদের শ্যামপুরের মানুষের সৌভাগ্য নয়, গোটা হাওড়া জেলার মানুষের সৌভাগ্য।
যে মহাপ্রভু পিছলদহ গ্রামে পা রেখেছিলেন।” তবে তার আক্ষেপ এখনও অনেক মানুষের কাছে এই বিষয়টি অজানা হওয়ায় এখানে পৌঁছতে পারছে না। যদি সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে অনেক ভক্ত এই গ্রামে আসতে পারবে বলে জানা বাসিন্দারা।