আবার যেখানে ছাত্র বেশি, সেই সব স্কুলেই পাঠাতে হবে উদ্বৃত্ত শিক্ষকদের। বিচারপতি বসুর সেই পর্যবেক্ষণকেই এ বার কার্যত সিলমোহর দিলেন হাইকোর্টের আর এক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এক মামলাকারীর আইনজীবী সুদীপ ঘোষ চৌধুরী জানান, পুরুলিয়ার বেলগড়িয়া প্রাথমিক স্কুলে সাত জন পড়ুয়া আর দু’জন শিক্ষক।
তাঁদের মধ্যে দীনবন্ধু দত্ত নামে এক জন শিক্ষক বদলি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কারণ, বারবার আবেদন করা হলেও তাঁকে বদলি করা হয়নি। অথচ ওই প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর মতো ছাত্রও রোজ উপস্থিত থাকে না। শিক্ষকের বদলির বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেননি।
কারণ, একটি স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম দু’জন শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সাকুল্যে সাত জন পড়ুয়া থাকার কথা জেনে আদালত পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে (ডিআই-প্রাথমিক) কাছের কোনও স্কুলে স্থানান্তরের ব্যাপারে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, যে স্কুলে পড়ানোর সুযোগ রয়েছে বা পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, ওই দুই শিক্ষককেও সেখানে পাঠানো যায় কি না, সেটাও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ডিআই-কে বিবেচনা করতে বলেছেন।
বিচারপতি বসুর নির্দেশে অবশ্য স্কুলশিক্ষা সচিব ইতিমধ্যে প্রাথমিক, উচ্চ-প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নতুন বদলি নীতি জারি করেছেন। যাতে অনলাইনে পোর্টালের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়ির কাছাকাছি বদলি ব্যবস্থা কার্যত বন্ধের পথে।
নয়া বদলি নীতিতে কী বলা হয়েছে?
মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে বদলির ক্ষেত্রে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতই সব চেয়ে গুরুত্ব পাবে। যে সব স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক অপ্রতুল, বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সে সব স্কুলকে। সে ক্ষেত্রে যে সব স্কুলে বাড়তি শিক্ষক আছে, সেখান থেকে তাঁদের বদলি করা হবে। নতুন নিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে কম শিক্ষক থাকা স্কুলেই।
বিশেষ ভাবে সক্ষম, প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁদের অবসরের দু’বছরও বাকি নেই, যে সব শিক্ষকের সন্তান আছে, তাঁদের বদলির বিষয়টি কম গুরুত্ব পাবে। শিক্ষক উদ্বৃত্ত, এমন স্কুল থেকে শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে একই জেলার মধ্যে বদলির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এমনকী, একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত রিজিয়ন বা অঞ্চল ভিত্তিক বদলিও অগ্রাধিকার পাবে।
নতুন নিয়োগে বিলম্ব বা সমস্ত নিয়ম-রীতি মেনে বদলি সময়সাপেক্ষ হলে অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেব উদ্বৃত্ত শিক্ষকের স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পড়াতে যেতে হবে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, এমন স্কুলে। তবে বেতন-সহ চাকরির অন্যান্য বিষয় পূর্ববর্তী স্কুল থেকেই নিশ্চিত করা হবে।
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলির ক্ষেত্রে বাম জমানার মতো এখন থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে বিকাশ ভবনের মাধ্যমে হওয়ার পরিবর্তে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানদের (ডিপিএসসি) হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে।